Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য


বাংলা গোয়েন্দা গল্প


All Bengali Stories    22    23    24    25    26    27    28    29    30    (31)       

-হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর - ১৩, আগরতলা, ত্রিপুরা ( পশ্চিম )




সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য
( বাংলা গোয়েন্দা গল্প )
- হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর, আগরতলা
২০-১১-২০১৭ ইং



আগের পর্বগুলি: ১ম পর্ব    ২য় পর্ব   


◕ সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য
৩য় পর্ব

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------

ঐ চুরির ঘটনার পর থেকে বড় কর্তা গঙ্গাছড়া গ্রাম সহ আসে পাশের দশ গ্রামে নিজের চর লাগিয়ে রেখেছিলেন, দীর্ঘদিন বরাবর নজর রেখেছিলেন কার আঙ্গুল ফুলে রাতারাতি কলাগাছ হয়ে যায়! কিন্তু না, কাউকে পাওয়া গেল না। কারোর আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায়নি। শুধু একবার গ্রামের কিছু লোক মিলে পাশের গ্রামের বিশুকে এক সন্ধ্যায় কিল চড় মারতে মারতে সর্দার বাড়িতে নিয়ে আসে। এই ব্যাটা নাকি রাতারাতি নিজের বাড়িঘর সব ঝকঝকে করে ফেলেছে। বাছুর সমেত এই বড় এক আচ্ছা জাতের দুধেল গরু কিনে এনেছে, বৌয়ের জন্য হাতের,কানের আর গলার সোনার গয়না কিনে এনেছে। দাদুর আমলের ছনের ঘরে চাল, রাতারাতি টিনের চালে বদলে ফেলেছে। শুধু তাই নয় পাশের গায়ের মধু পণ্ডিতের দু ফসলী ধানের জমিটিও কিনে ফেলেছে। যেই বিশু হাটে বাজারে ময়লা একটা ছেড়া জামা গায়ে দিয়ে পুটলা চানাচুর বিক্রি করে, তার হাতে হঠাৎ এত কাচা পয়সা এল কোথা থেকে? কোথায় সে পেল এত টাকা? এর জবাব যে বিশুকে দিতেই হবে।

সারা গ্রামে সবজী চোর নামে বিশুর কিছু কুখ্যাতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক আগে থেকেই। গঙ্গাছড়া গ্রামে সবজী চোর বললে, যে কেউ বিশুকেই দেখিয়ে দেবে। এর কারণও আছে, বহুবার অন্যের জমি থেকে সবজী চুরি করার সময় সে ধরা পড়েছে। কখনো দুটি শসা চুরি করতে গিয়ে কাঁদায় পরে কোমর অব্ধি ডেবে গেছে, আর উঠতে পারেনি। কখনো একটি বাঁধা কফি নিয়ে পালাতে গিয়ে খেতের আলেই হুঁচট খেয়ে পড়ে ওখানেই অজ্ঞান হয়ে গেছে। কখনো দুটি বেগুন চুরি করে নিয়ে যাবার সময় বলার কামড়ের যন্ত্রণায় হাউ মাউ করে চীৎকার শুরু করে দিয়েছে। এ হেন সবজী চোর কিনা হঠাৎ করে বুকের পাটা ফুলিয়ে সর্দার বাড়িতে হানা দিয়ে বসল? মাগো, কী সাহস?

সর্দার বাড়ির শুভাকাঙ্ক্ষীদের কিল চড়ে বিশুর হাত কুনি নাক কান সব ছুলে ছালে গেল। তারা বিশুকে টেনে হেঁচড়ে এক সন্ধ্যায় সর্দার বাড়িতে নিয়ে এল। দুর্গা মণ্ডপের সামনে বসল বিচার সভা। বড় কর্তা কাঠের সুন্দর কারুকার্য করা চেয়ারে বসলেন। অনেক লোক উনার চারিদিকে গোল করে দাঁড়িয়ে বিচার দেখতে লাগল। বড় কর্তার সামনে দাঁড়িয়ে শুষ্ক-পুষ্ক বিশু ডরে ভয়ে বৃক্ষশাখার বাতান্দোলিত শুষ্কপত্রের মত থরথর করে কাঁপতে লাগল। বড় কর্তা খুব শক্ত এক জালি বেত হাতে নিয়ে, তা সুদর্শন চক্রের মত ঘুরাতে ঘুরাতে, হিংস্র বাঘের মত গরগর করতে করতে বললেন, "এত টাকা রাতারাতি তুমি কোথায় পেলে?"

বড় কর্তার এমন বুক কাঁপানো আওয়াজ শুনে বিশুর টুং টাং সব বন্ধ হয়ে গেল। সে হাত জোর করে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে চুঁই চুঁই করে বলল, "আজ্ঞে কর্তা, আমার যে একটি দুই হাজার টাকার লটারি লেগেছিল। লটারির নাম গুপ্তধন ফাটাফাটি। ঐ যে মধু পণ্ডিত, তিনিও সামনে ছিলেন। তিনিও এই ঘটনার সাক্ষী আছেন।"

বড় কর্তা চীৎকার করে বললেন, "মধু পণ্ডিতকে তুরন্ত হাজির কর!"

এমন চীৎকারে হঠাৎ করে যেন বন জঙ্গল সব নীরব হয়ে গেল। কয়েক জন দৌড়ে গেল মধু পণ্ডিতকে ডেকে আনতে। এই মধু পণ্ডিতের আবার এক মুদ্রাদোষ আছে, কথায় কথায় ওর মুখ থেকে বাজে শব্দ বেড়িয়ে পড়ে। কী কারণে? কে জানে। অনেক বলে কয়েও কেউ উনাকে ঠিক করতে পারেনি। মধুর মুখে গালি, গ্রামের সবার এখন সয়ে গেছে। মুখে যাইই বলুক, তবে লোকটি সৎ। কোনদিন কারোর ক্ষতি করেননি, কারোর অপকারের কথা বলেনি কিংবা কাউকে খারাপ যুক্তিও দেন নি। তাই উনাকে সবাই সম্মানও করে। মুখ ফসকে কিছু বাজে কথা সদাই বেড়িয়ে পড়ে এই যা দোষ।

কিছুক্ষণের মধ্যেই আধা ধুতি পড়া অবস্থায়, গামছা গলায় মধু পণ্ডিত হাজির। বগলে তার এক জোড়া খড়ম। তিনি হাত জোড় করে নির্মল হাসি দিয়ে বললেন, "আজ্ঞে কর্তা, সন্ধ্যার পূজা সেরে সবে মাত্র উঠেছিলাম। ওরা তো আমাকে এই ধুতিটি পড়ার ও সময় দিলে না। তার আগেই কাঁধে উঠিয়ে ঝড়ের মত উড়িয়ে নিয়ে এল। খড়মগুলি পর্যন্ত বগলেই করে নিয়ে আসতে হল। হে হে।" এই বলে মধু পণ্ডিত নিজের টিনটিনে শিক্ষাটি নাড়িয়ে বগল থেকে খড়ম দুটি নিচে রাখলেন।

এ সব কাণ্ড কথার কোন ভ্রূক্ষেপ না করে রক্তবর্ণ চোখে বড় কর্তা মধু পণ্ডিতকে জিজ্ঞেস করলেন, "বিশু কত টাকার লটারি পেয়েছে?"

আসছে পরমেশ্বর পূজার ফর্দ টর্দ জিজ্ঞেস না করে, কর্তা কিনা সবজী চোরের কথা জিজ্ঞেস করলে, এ কোন স্বপ্ন টপ্ন নয় তো! নিজের গলাটা একবার শক্ত করে ঝেড়ে কেসে উঠলেন মধু পণ্ডিত। 'না, সব ঠিকই তো আছে!' তারপর ফ্যান ফ্যান করে বললেন, "ও বিশন কথা বলছেন! হ্যাঁ, মানে ঘটনাটি হয়ে ছিল এই রকম, সেদিন গুপ্তধন ফাটাফাটি লটারি বিক্রেতা নাথহরি খুব নেশা খেয়ে হুলাক্ষেতের বাজারে প্রচণ্ড হৈ-চৈ শুরু করে দিইয়েছিল। একে ধরে ধাক্কা দিচ্ছে, তো ওকে খুব বিশ্রী ভাষায় গালি দিচ্ছে। আমাকেও ছাড়েনি। আমি একবার ওর কাছে গিয়ে বললাম, 'বাবা নাথহরি, এসব কী কচ্ছ তুমি? এসব তো ভাল নয় বাবা।' আমার এ উপদেশ সে কানেই তুলল না, উল্টা আমাকে ধাক্কা মেরে এক বৃদ্ধ কুকুরের উপরে ফেলে দিল। কুকুরটি অতি বৃদ্ধ ছিল বলে বরাত জোরে প্রাণে বেঁচে গেলাম। তা না হলে এই মধু পণ্ডিত, শুধুই পণ্ডিতজী হয়ে থাকত, তার মধু কিছুই থাকত না। অতি কষ্টে সেই কুকুরের হাত থেকে নিজের প্রাণ বাঁচিয়ে, সেই বজ্জাত থেকে রেহায় পেয়েছিলাম কর্তা। তবে কথায় বলে, সময় চরিষ্ণু, যেমন কর্ম তেমন ফল। সন্ধ্যা নামতে না নামতেই তেমনটা হল। রাতের অন্ধকারে বাজারের লোকেরা গোবাঘাকে ধরে ধুলা ছুটিয়ে দিল, একেবারে চর্চরী বানিয়ে দিল। সেই চিত্র, বড়ই বিচিত্র। সবাই মিলে ওকে কী যে ধুনা দিল, সে আর কী বলব কর্তা, ওর লটারি ওর পুট-! না মানে, সবাই মিলে খুব ধুলাই করল ওকে। ওর জামা ধুতি সব খুলে -। না মানে, টাইট করে খেদানি দিল আর কী। জুতোপেটা কাকে বলে, এই প্রথম দেখলাম কর্তা। মারের চোটে ওর বাত-বায়ু পুত পুত করে বের হতে লাগল। তবু লোকে ওকে ছাড়ল না। যে পারল সেই দুই ঘা বসিয়ে দিয়ে গেল। আমিও আর বাদ যাইনি। নিজের বদলাটা তখুনি নিয়ে নিলাম, এই খড়ম দিয়েই দু ঘা বসিয়ে দিলাম, বেশ করে দুটি খামচিও দিয়ে দিলাম। এবার শালা যাবি কোথায়? সে এক দক্ষযজ্ঞ কাণ্ড মশাই। এত সব ঘটনার মাঝে, কে যেন ওর গুপ্তধন ফাটাফাটির টেবিলটাই ঢিল মেরে ছুড়ে ফেলেদিল। গুপ্তধন ফাটাফাটির লটারিগুলি ছিন্ন ভিন্ন হয়ে হাওয়ার মাঝে উড়তে লাগল। ঐ দিন ঐ বাজারে এই বিশনও উপস্থিত ছিল। সে করল কী, চানাচুরের পুটলা বানাতে সেই লটারির কাগজগুলি সব কুড়িয়ে নিল। ব্যাস কপাল খুলে গেল ওর। কুড়াতে চেয়েছিল গোবর, পেয়ে গেল রত্ন। পরদিন খবরের কাগজে দেখা গেল প্রথম পুরস্কারের লটারিটি তার টুকরির মধ্যেই পড়ে আছে।"

- "কত টাকা পেয়েছিল ও?"

- "আজ্ঞে সর্বমোট তিন হাজার টাকার লটারি। পাঁচশ টাকা সেই গুপ্তধন ফাটাফাটিই রেখেদিল। আর বাকি পাঁচশ রেখেদিল ঐ নাথহরি। বাকি দুই হাজার বিশু তার হাতে পেল। সে টাকাও কম কী? এর ঠিক দুদিন পর গঙ্গাছড়া বাজারে আমার সাথে বিশনের দেখা। আমাকে পেয়ে বিশন বলল, ' পুরুত মশাই, এই টাকা দিয়ে কী করি বলুন তো? আমাকে একটি বুদ্ধি দিন। হাতে থাকলেই তো টাকাটা বাজে খরচ হয়ে যাবে, সঠিক কাজে লাগাতে পারব না। বারেবারে কী আর লটারি পাব? বারেবারে কী আর কেউ লটারি পায়? আপনি তো জ্ঞানী-গুনি লোক, তাই আমাকে একটা উপায় বলে দিন। সত্যি বলছি বড় কর্তা, বিশন ব্যাটা সবজী চোর হলেও স্বভাব ভাল। ব্রাহ্মণ পণ্ডিতে খুব শ্রদ্ধা-বিশ্বাস রাখে। আমিও তাই ওকে উপায় বলে দিলাম। বললাম, বিশন, এই সুযোগ হাত ছাড়া করিস না। এই সুযোগে নিজের ঘর দোর সব ঠিক-ঠাক করে নে। কিছু জমি জামা কিনে রাখ। আর তাতে হাল দিতে গরু তো লাগবেই - তাই আচ্ছা দেখে গরুও কিনে নে। দুধ ও খাবি আবার হালও দিবি। বাকি যা পড়ে থাকবে তা দিয়ে বৌয়ের জন্য গয়না-গাটি কিনে রাখ, দুর্দিনে ওগুলি কাজে আসবে। সত্যি বলছি বড় কর্তা, এত টাকা পেয়েও ওর মাথাটা একটুও বিগড়ায়নি। একটা পয়সাও মদে-মাংসে খরচ করেনি, বাজে খরচ করেনি। যেমন যেমনটা বললাম, ও ঠিক তেমন তেমনিটাই করল। ঈশ্বর ওর কল্যাণ করুন।"

হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন বড় কর্তা, "ওরে! আমার মাতব্বর গাধার দল! এ কাদের ধরে নিয়ে এসেছিস তোরা! ওদের ছাড়া বুঝি আর লোক পেলি না! খোঁজ খবর না নিয়ে আর কখনো সাধারণ গ্রামবাসীকে হেনস্থা করবি না! ছেড়ে দে ওদের! আসল চোরকে ধর, তাকে খুঁজে বের কর। আরে না না, কাঁদিস না বাবা বিশু, আর কাঁদিস না। আয়, আয় আজ রাতের খাবারটা আমাদের বাড়িতেই পেট ভরে খেয়ে যা।"

সেই রাত তো পার হল, তেমন অনেক রাত পার হয়ে গেল, ক্রমে ত্রিশটি বছর পেড়িয়ে গেল, কিন্তু সেই চোরের আর খুঁজ পাওয়া গেল না। বড় কর্তা এখন বুড়ো কর্তা হয়ে গেছেন। নিজের বৌটিও কিছুদিন হল সজ্ঞানে স্বর্গে গেছেন। নিজের তিন ছেলে আজ সর্দার বাড়ির তিন স্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সর্দার বাড়ির দায়িত্ব এখন ওদেরই হাতে। সেদিনের সেই মহাপালোয়ানসম বাপ- কাকারা সবাই বুড়ো হয়ে গেছেন। লাঠি ভর করে হাঁটেন, কেউ কানে কম শুনেন, কেউবা চোখে কম দেখেন। আজ সর্দার বাড়িকে নতুন যুগের ছেলেরাই নতুন পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বড় কর্তার তিন ছেলে - বিনোদ বিহারী, নেপালহরি আর মনুরাম। মেজ কর্তা দুর্গাচরণের দুই মেয়ে, দুজনেরই বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট কর্তা হরিনাথের এক মেয়ে। তাকেও বিয়ে দেওয়া হয়ে গেছে। বাড়িতে এখন ছেলেরা বলতে বড় কর্তার তিন ছেলে বিনোদ বিহারী, নেপালহরি আর মনুরাম। এত দিন হয়ে গেল, না পাওয়া গেল সেই চোর, না পাওয়া গেল সেই চুরি যাওয়া গুপ্তধন। দূর দূর পর্যন্ত খোঁজ নিয়েও কোন লাভ হল না। সব কিছুই যেন হওয়ায় মিলিয়ে গেল। এমনটা কী কখনো হয়? তবে সে চোর, সেই গুপ্তধন গেল কোথায়?

পরবর্তী পর্ব

আগের পর্ব গুলিঃ পর্ব ১    পর্ব ২   

অন্য গোয়েন্দা গল্পঃ মাণিক্য   

All Bengali Stories    22    23    24    25    26    27    28    29    30    (31)    


## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717