Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য


ত্রিপুরার বাংলা গোয়েন্দা গল্প


All Bengali Stories    22    23    24    25    26    27    28    29    30    31    (32)     33      

-হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর - ১৩, আগরতলা, ত্রিপুরা ( পশ্চিম )

প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য
( ত্রিপুরার বাংলা গোয়েন্দা গল্প )
- হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর, আগরতলা
০৭-০৩-২০১৮ ইং



আগের পর্ব গুলি: ১ ম পর্ব    ২ য় পর্ব    ৩ য় পর্ব   


◕ প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য
৪ র্থ পর্ব

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------

রাজবংশীর ধীর-শান্ত কথাগুলি নবদ্বীপ চক্রবর্তীর কানে দৈববাণীর মত শোনাল। যেন আকাশে গুর-গুর করে বেজে উঠল একটি আকাশবাণী। নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারলেন না তিনি। অত্যন্ত চমকে থরথর করে কেঁপে উঠলেন তিনি, "কী? কী? কী বললে তুমি?"

রাজবংশী সাগরের মত ধীর, প্রশান্ত হাসিতে বলল, "হ্যাঁ, আপনি ঠিকই শুনেছেন। আপনার বৌমা'র কিচ্ছু হয়নি। সে জীবিতই আছে। আপনাদের কাছে আবার সে হাসি মুখেই ফিরে আসবে। আমি ফিরিয়ে আনব তাকে। কথা দিলাম। শেষ হাসি আমরাই হাসব। তবে আপনাদের ধৈর্য ধরতে হবে।"

এ কথা শুনেই চীৎকার করে দুই হাত উপরে তুলে অসীম আনন্দে চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠলেন বৃদ্ধ। মহানন্দে ডাকা-ডাকি শুরু করে দিলেন, "রাম, রাম! ললিতা-ললিতা! বৌমা আছে! বৌমা আছে! বৌমা মরেনি গো, বৌমা মারা যায়নি! বৌমা আসবে! বৌমা আসবে! আহা কী আনন্দ! কী যে আনন্দ লাগছে!"

চীৎকার শুনে চোখ মুছতে-মুছতে দৌড়ে ঘর থেকে বের হলেন ললিতা-দেবী। স্বামীর এই অবস্থা দেখে বেশ অবাক হলেন, খুব খুশীও হলেন। রাজবংশীর একটি কথায় যেন খুশির হাট বসে গেল উঠানে। বৃদ্ধ আনন্দে, খুশিতে পাগল প্রায়। কী করবেন না কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। বারবার রাজবংশীর হাত ধরে ধন্যবাদ দিতে লাগলেন। মৃত প্রায় এই বৃদ্ধ-বৃদ্ধার মনে এমন খুশির জোয়ার এনে দিতে পেরে রাজবংশী যেন নিজেই কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে গেল। তবে সদানন্দ জানে, রাজবংশী এমনি-এমনি কথাগুলি বলেনি, ফালতু কথা বলার লোক সে নয়। নিশ্চয়ই সে রহস্যের গন্ধ পেয়েছে। মৌমাছির মত আসল ফুলবাগানেই যে এবার সে উড়ে যাবে, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে চিন্তার বিষয় হল, এমন খুশির কথা শুনেও রাম কিন্তু ঘর থেকে বের হল না। তবে কী সে সত্যিই জানে, বনশ্রী খুন হয়ে গেছে? কারা খুন করেছে, কিভাবে খুন করেছে, তবে কী সে সব জানে? তার মানে কী বনশ্রী আর নেই? এই বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে রাজবংশী মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছে? সদানন্দ নিজের মনেই নিজে হাহাকার করে উঠল, "না! না! এ হতেই পারে না! রাজবংশী মিথ্যা আশ্বাস দিতে পারে না! মিথ্যা আশ্বাস দেবার লোক সে নয়!"

রাজবংশীর ডাকে চমক ভাঙল সদানন্দের, "এই সাধুদা! কী ভাবছ তুমি? চল, ঘরের ভিতরে চল। রামের সাথে একটু দেখা করে আসি, একটু কথা বলে আসি।" বৃদ্ধ-বৃদ্ধা অতি সমাদরে অতিথি দুজনকে ঘরে নিয়ে যেতে লাগলেন। রাজবংশীর পিছন-পিছন যেতে-যেতে সদানন্দ ফিস-ফিস করে বলল, "ভাই, সত্যি করে বল তো, বনশ্রী জীবিত আছে তো?"

রাজবংশী হাসতে-হাসতে সদানন্দকে একটি চাপর দিয়ে বলল, "দূর বোকা! একশ শতাংশ। সে সত্যিকারের খুন হয়ে থাকলে, তার গুণ্ডা ভাই'রা এতক্ষণে এই বাড়ি ধুলায় মিশিয়ে দিত। তার উপর ঐ পটাস, পটভবেশ। পটভবেশই তো আমাকে বেশী ভাবিয়ে তুলছে। মনে হচ্ছে নিজেকে বাঁচাতে বনশ্রী নিজেই অন্তর্ধান হয়ে গেছে।" কথা শেষ করে নিজের কথাতেই হা-হা করে হেসে উঠল রাজবংশী।

গরিব ব্রাহ্মণের ঘর। একটি বহু পুরানো খাট, একটি আলনা আর একটি কাঁচ ভাঙ্গা কাঠের আলমারি ছাড়া ঘরে আর কোণ আসবাবপত্র নেই। পুরানো মোটা ফ্রেমে বাঁধা বেশ কয়েকটি পুরানো ছবি টাঙানো আছে ঘরের দেওয়ালে। এছাড়া বিলাসিতার আর কোন ছাপ নেই। সারা ঘরে খেলে বেড়াচ্ছে চন-মনে মন চাঙ্গা করা আলো-বাতাস। ঘরের কোনায় কোনায় উড়ে বেড়াচ্ছে পরম প্রশান্তির তরঙ্গ, পরম তৃপ্তির ভাব। এই গরিব ব্রাহ্মণের ঘরে ডুকে খুব ভাল লাগল রাজবংশী। হঠাৎ তার চোখ পড়ল দেওয়ালের একটি বাঁধানো ছবিতে। দেখলেই বুঝা যায় নতুন ছবি, দেওয়ালে টাঙানো হয়েছে খুব বেশীদিন হয়নি। ছবিটি দেখেই রাজবংশী চমকে উঠল। একটি বিদ্যুৎ তরঙ্গ যেন তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত দৌড়ে গেল। থর থর করে কেঁপে উঠল সে। মনে মনেই চীৎকার করে উঠল, "এ কী? এ কী দেখছি আমি? এই তো সেই রাজকন্যা, যাকে আমি আজ সকালে সরোবরে ডুবে যেতে দেখেছি। আশ্চর্য, তবে এই হল বনশ্রী, সে তার রামকে বাঁচানোর কথাই কাতর ভাবে আমাকে বলছিল? ও মাই গড! ও মাই গড! কী বিশাল কো-ইন্সিডেন্ট।" বিনা অনুমতিই ধপ করে খাটের এক কোনে বসে গেল রাজবংশী। ধীরে বলল, "এটি বুঝি বনশ্রীর ছবি?"

ছবিটিতে হাত বুলাতে বুলাতে বৃদ্ধ বললেন, "হ্যাঁ, এটিই বনশ্রীর ছবি, আমার মা।"

নীরবে বেশ কিছুক্ষণ ছবিটির দিকে তাকিয়ে রইল রাজবংশী। ছবিটি দেখলে বুঝা যায়, সাহসী, বুদ্ধিমান মেয়ের ছবি। যেন একটি তেজ, যেন একটি আভা তার মুখ-মণ্ডল থেকে বের হয়ে আসছে। রামের পাশে এরকম একটি মেয়েকেই মানায়। ধীরে-ধীরে ছবিটি থেকে চোখ সরিয়ে ঘরের চারিদিকে চোখ বুলাতে লাগল রাজবংশী। দেখা গেল অপর পাশের জানালার সিক ধরে বাইরে ফুলবাগানটির দিকে তাকিয়ে আছে রাম। মানুষ নয় যেন একটি নিষ্প্রাণ মৃত পাথর। এই কিছুক্ষণ আগে বাড়ির উঠানে এত বড় যে একটি প্রলয় ঘটে গেল, এখন ঘরের ভিতর এত যে হেল-দোল হচ্ছে, তাতে ওর যেন কোন ভ্রুক্ষেপ নেই, কোন উৎসাহ নেই, উদ্দীপনা নেই, কোন আগ্রহ নেই। যেন একটি পাথর পড়ে আছে, মৃত্যুর অপেক্ষায় বসে আছে। ললিতা-দেবী চোখের জলে ভেসে নীরবে একটি প্লাস্টিকের থলি এনে রাজবংশীর সামনে রাখলেন। ব্যাগটি দেখে নবদ্বীপ চক্রবর্তীর খুশিতে হঠাৎ কে যেন জল ঢেলে দিল, অন্ধকার ঢেলে দিল। হাসি-হাসি মুখ কাঁদো-কাঁদো হয়ে গেল। তিনি অতি করুন সুরে বললেন, "এই দেখ বাবা, রাম এতে কী সব জমা করছে?" ব্যাগ খুলে নিজেই জিনিসগুলি বের করতে লাগলেন। অনেকগুলি ব্লেড, ছোট বড় অনেকগুলি ভাঙা কাঁচের টুকরা, একটি শক্ত লম্বা দড়ি, একটি ছুরি, ঘুমের অনেক ঔষধ, কীটনাশক বিষ। বৃদ্ধ জল ভরা চোখে বললেন, "১৬ই জানুয়ারির পরে তার নিজের জীবন শেষ করতে এত গুলি হাতিয়ার জমা করেছে রাম। ওর এক জীবন শেষ করতে কি আর সব গুলি লাগবে? লাগবে না। রাম শেষ হয়ে গেলে বাকীগুলি দিয়ে আমরা দুজনও শেষ হয়ে যাব।"

কথাটি শোনা মাত্রই রাজবংশী ধপ করে জ্বলে উঠল। চীৎকার করে ধমক দিয়ে উঠল। যেন ঘরের মধ্যে হঠাৎ একটি বজ্র উড়ে এসে পড়ল। সেই বজ্রের শব্দে সবাই একেবারে ছেবরা খেয়ে উঠল, এমনকি সদানন্দ পর্যন্ত। রাজবংশী প্রচণ্ড গলা করে বলতে লাগল, "ধুর মশাই! তখন থেকে বারবার এক কথাই বলে যাচ্ছেন! আর কি কোনও কথা নেই? যতই বলছি বনশ্রী জীবিত আছে, বনশ্রী জীবিত আছে, আমার কথাগুলি যেন আপনাদের কানেই ঢুকছে না! আমার কথার কি কোন দাম নেই নাকি? এক কথা বার-বার বলে যাচ্ছেন। শুনুন মশাই, আপনার বৌমাকে অপহরণ করা হয়েছে। তার ভাই'রা তাকে অপহরণ করেছে। সব জেনে শুনে কোথায় আপনারা বনশ্রীর খুঁজ করবেন, তা না করে ঘরে বসে-বসে ছেলের মরার অপেক্ষা করছেন, নিজের মরার অপেক্ষায় আছেন। এটা কী মূর্খের মত ব্যবহার হচ্ছে না! আর ঐ আরেকজনকে দেখুন, পরবীর, দিগবিজয়ী বীর। নিজের বৌকে কেউ অপহরণ করে নিয়ে গেল আর উনি বৌয়ের খুঁজ না করে নিজের মৃত্যুর পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন। ওদিকে তোর বৌ হয়তো তোর পথ চেয়ে বসে আছে, কখন তুই যাবি আর তাকে ফিরিয়ে আনবি! ফিরে আসার দায়িত্ব কী শুধু বনশ্রীর একা'র, তাকে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব কী তোর নেই? হতচ্ছাড়া কাপুরুষ কোথাকার! যখন হাতিয়ার উঠানোর সময় তখুনি হাতিয়ার রেখে দিলি! এই বুঝি তোর ভালবাসা? এই বুঝি তোর প্রেম? মর্কট, মূর্খ!"

কথা গুলি একদম ঠিক জায়গাতে তীরের মত গিয়ে বিঁধল। ছটফট করে উঠল রাম। পাথর ভেঙ্গে একটি মানুষ যেন বেড়িয়ে এল, ঘুরে দাঁড়াল রাম। ধীর পায়ে এগিয়ে এসে রাজবংশীর পায়ে পড়ে গেল। বলল, "আমি জানিনা আপনি কে? তবু আপনার কথা আমার ভাল লেগেছে। আপনিই পারবেন আমার বনশ্রীকে ফিরিয়ে আনতে। তার জন্য আপনি যা বলবেন তাই আমি করব। আমাকে কী করতে হবে বলুন দাদাভাই। বনশ্রীকে হারিয়ে আমি যে এখন দিশাহারা। কী করব না কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না। আপনি আমাকে রাস্তা দেখান। দয়া করে এই আধারে আমাকে পথ দেখান।"

রাজবংশী নিজের সুর আর তেজ চট করে পাল্টে নিয়ে খুব শান্ত আদরের স্বরে বলল, "না ভাই, এত হতাশ হওয়ার কিছু নেই। বিপদের সময়ই তো মানুষের আসল পরীক্ষা হয়। মানুষের সততা, নিষ্ঠা, ধৈর্য, বুদ্ধি, জ্ঞান, সাহস সব কিছুর পরীক্ষা হয় বিপদে। বিপদ এলে তাই এই হাতিয়ারগুলিকে কখনো ফেলে রাখতে নেই। এইগুলিই তো বিপদ মোকাবেলার প্রধান হাতিয়ার। আর এত হাতিয়ার থাকতে তুমি হতাশ হবে কিসের জন্য? উল্টো সকল হাতিয়ারে সজ্জিত হয়ে বিপদের চোখে চোখ রেখে কথা বল। বিপদের চোখে চোখ রেখে কথা বললে সে একটা না একটা পথ তোমার জন্য ছেড়ে দেবেই দেবে। এ ভাবেই তো বাঁচার রাস্তা বের হয়। তবেই তো হার বা জিত কিছু একটা হবে, হয়তো তুমিও জিততে পার। তা না হলে তো শুধু পরাজয়ই পরাজয়। এবার তুমি নিজের কাছে নিজেই প্রশ্ন কর, এই বিপদের সমাধান কী?"

রাজবংশীর কথা শুনে কিছুক্ষণ ধুম মেরে বসে গেল রাম। তারপর হঠাৎ চীৎকার করে উঠল, "কালি-পিসি! কালি-পিসি! হ্যাঁ, কালি-পিসিকে ধরতে হবে!"

তার কথা শুনে সবাই অবাক! বিস্ময়ের সুরে নবদ্বীপ চক্রবর্তী বললেন, "কালি-পিসি! কী হল তোর কালি-পিসির?"

    "সেদিন কালি-পিসি বিকেলে আমাদের বাড়িতে এসে ছিলেন। তোমারা সেদিন সাব্রুমে মাসির বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। বাড়িতে শুধু আমি আর বনা ছিলাম। আমি ঘরেই বসেছিলাম। উনার সাথে কথা বলতে মন চাচ্ছিল না। বনা ওনার সাথে কথা বলছিল। কালি-পিসি অনেকক্ষণ বনা'র সাথে গল্প গুজব করলেন। বিকেল বেলায় এসেছিলেন, কথা বলতে-বলতে রাত হয়ে গেল। শেষে ফিরে যাবার সময় বনাকে বললেন,'রাত হয়ে গেছে, আমাকে কি তুমি একটু এগিয়ে দেবা বনশ্রী?' বনা মাথা নেড়ে কালি-পিসিকে পিছু-পিছু ঘর থেকে বের হয়ে গেল। কিন্তু দেখা গেল দুই তিন মিনিট পর কালি-পিসি বনাকে ডাকছেন, 'বনশ্রী আমি তো তোমার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। আসো। তাড়াতাড়ি আসো, বেশী দেরী করো না।' অবাক হলেও কথাটির তেমন গুরুত্ব দেইনি আমি। ভেবেছিলাম বনা হয়তো ধারে কাছেই কোথাও আছে। কিন্তু না! কিছুক্ষণ পরে, প্রায় মিনিট দশেক পর আবার কালি-পিসি বনাকে ডাকলেন, 'এই বনশ্রী এতক্ষণ কী করছ তুমি? আমি আর কতক্ষণ তোমার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকব? আসো, তাড়াতাড়ি আসো।' কালি-পিসির এই কথা শুনে আমার টনক নড়ল। ঘর থেকে বের হয়ে এলাম। দেখি কালি-পিসি ঘরের সামনেই দাঁড়িয়ে আছেন। আমাকে দেখে ধমকের সুরে বললেন, 'কী রে রাম, বনা এতক্ষণ কী করছে? তখন থেকে আমাকে এখানে দাঁড় করিয়ে রাখল! সেই কোন সময় থেকে তার জন্য দাঁড়িয়ে আছি?' কালি-পিসির কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে গেলাম। বনাকে তো কালি-পিসির পিছন-পিছন ঘর থেকে বের হয়ে যেতে দেখলাম! তবে সে গেল কোথায়? ঘর থেকে বের হতে না হতেই কী হাওয়া হয়ে গেল? গেল কোথায় সে? এরপর সবাই মিলে বনা'র খোঁজ করতে লাগলাম। কালি-পিসিও বনা'র খোঁজ করতে লাগলেন, কিন্তু আজও বনাকে পাওয়া গেল না।"

রামের কথা শুনে দুঃখের মাঝেও হা-হা করে জোরে হেসে উঠল রাজবংশী। হাসতে-হাসতে বলল, "কী? পেলে তো একটা পথ? কেন? কেন আগে এত গুরুত্বপূর্ণ কথাটি তোমার মনে আসেনি? এই পথটি ধরে ধাপে-ধাপে এগিয়ে যাবার পরিবর্তে কোথায় ঘরে ঘাপটি মেরে বসে আছ? মরে যাবার পরিকল্পনা করছ? তুমিই যদি না থাক, তবে বৌয়ের খুঁজ করবে কে? বৌয়ের জাহাজকে তো ঘাটে ফিরাতে হবে, না কি?"

রাজবংশীর কথা শুনে বহুদিন পর রামের মুখে হাসি ফুটে উঠল। রাজবংশী প্রশ্ন করল, "আচ্ছা, ঠিক আছে, যা হবার তা হয়ে গেছে। এবার আমাকে বল, কালি-পিসিটি কে?"

উত্তর দিতে নবদ্বীপ চক্রবর্তী এগিয়ে এলেন। বললেন, "আমার দূর সম্পর্কের বোন। নাম কাকলি চক্রবর্তী। কিন্তু কুট স্বভাবের বলে লোকে তাকে কালি চক্রবর্তী বলে ডাকে। খুব বাজে মেয়ে। অপকর্মে একেবারে সিদ্ধহস্ত। এই সব কারণে আমিই তার সাথে বেশী সম্পর্ক রাখিনি। তার কিন্তু বিয়ে হয়েছিল। তবে তার নীচ স্বভাবের কারণে জামাই তাকে ঘর থেকে বের করে দেয়। জামাইটি খুব ভাল। মাঝে-মাঝে আমাদের এখানে আসে। আর এই কারণেই আমাদের সাথে কালি'র যত বিবাদ। এখানে কালি তার বৃদ্ধ বিধবা মা'র সাথে থাকে। মাও একটা সূর্পণখার চেয়ে কম নয়। কালি যে আমাদের বাড়িতে এসেছিল, এই ঘটনাটি আমি এই মাত্র জানলাম। আগে জানলে আমি নিশ্চয়ই তাকে প্রশ্ন করতাম। সে তো বছরের পর বছর কখনো আমাদের বাড়িতে আসে না। আমাদের খুব ঘৃণা করে, অবহেলা করে। তবে কেন সে ঘাটের কড়ি খরচ করে সেদিন আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন, এটা নিশ্চয়ই একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আমার স্ত্রী, ললিতার বোনের বাড়ি আছে সাব্রুম। আমারা ঐ সময় সেখানেই বেড়াতে গিয়েছিলাম। আর এই সুযোগেই বুঝি কালি আমাদের এত বড় একটা সর্বনাশ করে গেল! সাব্রুম থাকার সময়ই আমারা বৌমা'র খুনের খবর পাই। খবর শুনে বাড়ি ছুটে এলাম। বাড়িতে এসে দেখি বাড়ি ভর্তি পুলিশ আর মহিষাসুরের লোক। রামকে অনেক ঘাঁটা-ঘাঁটি করলাম, কিন্তু দেখলাম, বৌমা'র শোকে আর একের পর এক হুমকিতে-ধমকিতে সে পাথরের মত হয়ে গেছে। কোন কিছুতেই সে আর মুখ খুলেনি। সেই দিনের পর আজ এই প্রথম এমন ভাবে সে মুখ খুলল। তার মুখে ঘটনাটি শুনেই তো ঘুম চটে গেল, মনে হল খুব সন্দেহজনক ব্যাপার। কারণ, কালিকে বিন্দু মাত্র বিশ্বাস করা যায় না। সে এক ঘাগু অপরাধী, এক অমঙ্গল তিথি। তার কাছে কোন পূর্ব ঘাট, পশ্চিম ঘাট নেই। সে পারে না, এমন কোন নীচ কাজ এই পৃথিবীতে নেই। তার সুরের পর্দা সদা নরকেই বাজে।"

রাজবংশী নবদ্বীপ চক্রবর্তীকে বাধা দিয়ে প্রশ্ন করল, "এই কালি'র বাড়ি কোথায়? আশে-পাশে না কি দূরে? একবার যাওয়া যাবে?"

    "এই তো খুব কাছে। চলুন এখুনি যাই। রেখা যখন একটি দেখতে পেয়েছি তখন একবার খুঁজ নিয়ে দেখা দরকার আসলে সেটি সাপ না দড়ি।"

    "তবে চলুন যাওয়া যাক। চল রাম, তুমিও আমাদের সাথে চল। একবার স্বচক্ষে দেখে আসি কালি'র কাণ্ড-কারখানা।"

কালি'র বাড়িতে যেতে সবাই ঘর থেকে বের হয়ে গেল। ঘরের পিছনেই ছিল একটি ফাঁড়ি পথ, সর্ট-কাট রাস্তা। সেই পথে কিছু দূর যাবার পর না-জানি কেন রাজবংশী বাধা দিয়ে বলল, "না কাকা, এই পথটি নয়, বড় পথ ধরে চলুন। আমার মন বলছে যদি কিছু হয়ে থাকে তবে বড় পথেই হয়ে থাকবে। কারণ এই ফাঁড়ি পথটির যা অবস্থা, তাতে রাতের অন্ধকারে তাড়াতাড়ি চলা খুব মুস্কিল। ঐ রাতে অপরাধীরা যে এই পথটি ব্যবহার করেনি, তা আমি এক-প্রকার নিশ্চিত।"

রাজবংশীর কথায় ফাঁড়ি পথটি ছেড়ে সবাই বড় পথ ধরেই হাটতে লাগল। কিছুদূর যাবার পর আচানক রাজবংশী পিছন ফিরে বলল, "রাম, তুমি একটু পিছন-পিছন হাঁটো তো, তামার বাবার সাথে আমার গুটি কয়েক কথা আছে।"

রাম সবার পিছনে একটু দূরত্ব রেখে হাটতে লাগল। কিন্তু সদানন্দ লক্ষ্য করল, রাজবংশী নবদ্বীপ চক্রবর্তীর সাথে তো কোন কথাই বলছে না। তবে কেন সে রামকে পিছনে, একটু দূরে হাটতে বলল? বেশ অবাক হল সদানন্দ। সে ভাবতে লাগল, "তাহলে কি রাজবংশী তার খেলা শুরু করে দিল? জাল বিছানো আরম্ভ করে দিল? তার গণিত কি তবে কথা বলা শুরু করেছে?" অবাক চোখে রাজবংশীর দিকে তাকাল সে। জবাব ও এল রাজবংশীর দিক থেকে। চোখের ঠারে রাজবংশী জানিয়ে দিল, "ইয়েস, সন্দেহময় পথ।"
পরবর্তী পর্ব

আগের পর্ব গুলি: ১ম পর্ব    ২ য় পর্ব    ৩ য় পর্ব   

অন্য গোয়েন্দা গল্প:

মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   



All Bengali Stories    22    23    24    25    26    27    28    29    30    31    (32)    

## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717