Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

দেহরক্ষী


বাংলা উপন্যাস


All Bengali Stories    22    23    24    25    26    27    (28)       

-হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর - ১৩, আগরতলা, ত্রিপুরা ( পশ্চিম )

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------

দেহরক্ষী
( বাংলা উপন্যাস )
- হরপ্রসাদ সরকার, আগরতলা, ত্রিপুরা



Previous Parts: 1st Part    2nd Part    3rd Part   


◕৪র্থ পর্ব

নিজ প্রাসাদ থেকে বেরিয়েই পদ্মবীণা সেই আধারের মাঝে হারিয়ে গেল। কোথায় গেল - কেউ জানল না। এই পৃথিবীতে কিছু কিছু লোক আছে যাদের অদম্য নিষ্ঠা, উদ্যম, তৎপরতা আর সাহস তাদের বুকের মাঝে সূর্যের মত প্রজ্বলিত থাকে। ঘোর বিপদ বা ঘোর আধারেও ওরা মনের জোর আর উদ্যম হারায় না। এই গুন গুলিই তাদের আলো দিয়ে পথ দেখিয়ে এগিয়ে নিয়ে যায়। এ তাদের এক ঐশী ক্ষমতা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কোন কিছু দিয়েই ঐ সব লোকদের আটকানো যায় না। মৃত্যু দিয়েও ওদের ঢাকা যায় না। তারা না চিনে ভয়, না চিনে মরণ, না চিনে জীবন। শুধু জানে পরাক্রম, বীরত্ব আর নিষ্ঠা দিয়ে কর্তব্য পালন করতে। এই দেহরক্ষীদের মতো এই গুপ্তচরেরাও প্রাণ হাতে নিয়ে রণ-সমুদ্রে একের পর এক ঝাঁপিয়ে পড়ে।

গভীর রাত। সারা গায়ে কালো চাদর মুড়ে, আধারের সাথে মিশে, পায়ে পায়ে ঐ কে চলছে নির্জন শ্মশানের দিকে?

শেষ রাত। কাপট্যকানাত গভীর ঘুমে বিভোর ছিল। হঠাৎ তার কানে গেল চাপা নাকা নাকা সুরের একটি গান। এত রাতে এই নির্জন শ্মশানে এ কার গান? ধরমর করে উঠে বসল সে। ত্রিশূলটা শক্ত হাতে ধরে কয়েক মুহূর্ত বসে রইল - ঘুমের ঘোরটাকে সে খুব তাড়াতাড়ি কাটিয়ে উঠতে চাইল। একাগ্র চিত্তে মনোনিবেশ করল গানের গলার স্বরের উপর। গলার স্বরটা তার খুব চেনা চেনা লাগল - কিন্তু সে নিশ্চিত হল না। অন্ধকার কুঠিরে জোরে একটা গলা ঝাড়া দিয়ে তেমনি বসে রইল কাপট্যকানাত। ফিসফিস করে দরজার ওপাশ থেকে চাপা গলায় ভেসে এল দুই পঙক্তি ছন্দ -
"সন্ধ্যার পরের দ্বিতীয় প্রহরে দক্ষিণ আকাশে যদি ধ্রুব তারা থাকে তবে তুই মৃত, বিপদ। নয়তো সব উল্টা।"
চিনতে আর কিছু বাকি রইল না। আলো না জ্বালিয়েই, অন্ধকার কুঠিরের দরজা খুলে দিল কাপট্যকানাত। পিছন দিকে একবার তীক্ষ্ণ নজরে চেয়ে কুঠিরে ঢুকে গেল পদ্মবীণা। রাত তখনও অনেক বাকী - ভোরের পাখীরা তখনো কোন গান ধরে নি।

কুঠিরে একটি অতি ক্ষুদ্র আলো জ্বাললো কাপট্যকানাত। তার আবছা আলোতে একটা নক্সা খুলে ধরল দু-জনে। রাজশ্রেষ্ঠ উওর দিকে আছেন। কিন্তু কোথায়? সেই জায়গাটাই তারা চিহ্নিত করেতে চাইল, অনুমান করতে চাইল। রাজশ্রেষ্ঠ রাজপ্রাসাদ ছেড়ে গেছেন এই সমাচারটা জানলেও কোন পথে তিনি কোথায় গেছেন এই সমাচার কারো কাছে নেই। তাই সম্ভব্য স্থানটি তারা অনুমান করতে চাইল। ব্যক্তিগত সাক্ষাতকারের জন্য পদ্মবীণা সেই উদ্দেশ্য যাত্রা করবে এমনটাই পরিকল্পনা। তবে আরও একটি রাস্তা খোলা আছে। বিহঙ্গ মার্গ। কপোত দিয়েও সুধামেলের কাছে বার্তা পাঠানো যাবে - তবে তা অত্যন্ত প্রয়োজনে। দুজনে মিলে ঠিক করল যে, বিহঙ্গ মার্গেই আগে সমাচার পাঠানো হোক। কারণ বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতি মুহূর্ত অতি মূল্যবান। যত তাড়াতাড়ি সমাচারটি পাঠানো যায় ততই মঙ্গল।

কুঠিরের এক কোনা থেকে একটি নরম ছোট শাল পাতা বের করল কাপট্যকানাত। তাতে খাগের কলমে ছোট্ট একটি ছন্দ লিখে দিল।
"রাত হল অন্ধকার
জগতে জয় জয়কার।।
গুপ্ত কিছু কথা রয়
রুগীর পাশে কে কয়?"
এই ছন্দের মাথা-মুণ্ডু কিছুই বোঝা গেল না। এত গোপনে কী এত মহামূল্যবান গোপন বার্তা লেখা হল তাতে?

তখন ভোরের আলো পৃথিবীকে প্রায় ছুঁই ছুঁই। একটি কপোত এসে কাপট্যকানাতের কুঠিরের দরজায় বক্-বকম্-বক্-বকম্ ধ্বনি তুলল। প্রথমে দু-জনের কেউ সেদিকে খুব একটা মনোযোগ দিল না। তবে কপোতটি যখন ওখানেই বারে বারে ঘুরে ঘুরে বক্-বকম্-বক্-বকম্ করতে লাগল তখন তারা অতি সতর্ক হয়ে গেল। কাপট্যকানাত দরজাটা একটু ফাঁক করে দিতেই একটি কপিল রঙের কপোত কুঠিরে ডুকে সোজা পদ্মবীণা কাঁধে। দুজনেই বেশ অবাক হল। নিজের মেঘমালাকে এক পলকেই চিনে ফেলল পদ্মবীণা। কিন্তু অত্যন্ত অবাক হল এই ভেবে যে, মেঘমালা এখানে এলো কী ভাবে? সে তো ছিল তার প্রাসাদে খাঁচায় বন্দী! তবে তার এখানে এই সময়ে আসার কারণ কী? এ কি কোন বিপদের সংকেত? তবে কী পদ্মবীণাকে ধরতে শত্রু জাল বিছিয়ে দিল? ক্ষিপ্র হাতে নিজের তলোয়ার হাতে নিয়ে কুঠিরের ফাঁক দিয়ে চারিদিকে ভাল করে দেখতে লাগল সে। না! কোথাও তো কোন জন মানব নেই। কুঠিরের সেই অতি আবছা আলোতে মেঘমালা-র দিকে ভাল করে তাকাতেই তার চোখে পড়ল মেঘমালা-র পায়ে বাঁধা একটি মাদুলি। অতি দ্রুত সেটি খুলল পদ্মবীণা। তা থেকে যে সমাচারটি পাওয়া গেল তা দেখে কেঁপে উঠল ওরা দু-জন। ওতে লেখা আছে - রাজার পোষা পায়রা দিয়ে রাজাকে বন্দী করার নতুন পরিকল্পনা।

বুঝতে কিছুই বাকী রইল না তাদের। শত্রু এবার মোক্ষম চাল দিয়েছে। রাজশ্রেষ্ঠকে ধরতে তারই পোষা পায়রাটিকে ছেড়ে দেওয়া হবে আর তার পিছু পিছু ধাওয়া করা হবে। ব্যবস্থা থাকবে সেটি যেন খুব উঁচুতে উঠতে না পারে আবার একবারে খুব বেশী দূরেও উড়ে যেতে না পারে। এই সমাচারটি পেয়ে কিছুক্ষণের জন্য কিংকর্তব্য-বিমূঢ় হয়ে পড়ল ধুরন্ধর দু-জন গুপ্তচর। কিন্তু ওরাও ঐ পরিস্থিতির জন্য সদাই তৈরী থাকে। এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনার সাথে সদাই তাদের লুকো-চুরি খেলা হয়। চটপট ওরা পরিকল্পনা বদলে ফেলল আর এই মুহূর্তে কী কী করনীয় তাই করতে শুরু করে দিল।

পদ্মবীণা বলল - আমাদের সামনে এখন গুরুত্বপূর্ণ দুটি কাজ। প্রথম কাজটি হল এই সমাচারটির সত্যতা যাচাই করা। কে এই সমাচারটি পাঠাল? কেন পাঠাল? তা ও আমার ঘর থেকে! এর মানে হল, ঐ ব্যক্তি নিশ্চয়ই জানে আমি কে - কী আমার কাজ?

কাপট্যকানাত বলল - আর দ্বিতীয় কাজটি?

- বার্তাটি হয় সত্য, নয় মিথ্যা - কিছু একটা হবে। কিন্তু বার্তাটি যদি সত্যিই হয়ে থাকে তবে তো সব কিছু শেষ হয়ে যাবে। তাই এখুনি রাজশ্রেষ্ঠকে এর সূচনা দেওয়া দরকার - যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। নয়তো এক এক পল দেশমাতার এক একটি প্রাণের হিসাব নিতে থাকবে। বার্তাটি পাওয়া মাত্র সুধামেল নিশ্চয়ই একটি ব্যবস্থা করবে, একটি পরিকল্পনা সাজাবে। তাই আর দেরী করা চলে না।

অতি দ্রুত সেই ছোট শাল পাতাটির মধ্যে এই সমাচারটিও লিখে একটি গিরিবাজ আকাশে উড়িয়ে দেওয়া হল। পূর্ব আকাশে আধা সূর্য লাল হয়ে উঁকি দিয়েছে। ভোরের সুনীল আকাশে একটি গিরিবাজ নতুন সমাচার নিয়ে উড়ে যেতে লাগল। নিজ প্রাসাদে ফিরে যেতে পদ্মবীণাও বেরিয়ে পড়ল কাপট্যকানাতের কুঠির থেকে। সে ভাবতে লাগল - এই পরিস্থিতিতে কিছুতেই রাজধানী ছেড়ে দূরে থাকা যায় না। নিজ প্রাসাদে ফিরে গেলেই এই রহস্যের সমাধান হবে। যদি শত্রুর হাতে পড়ে যাই তবে দেশমাতার জন্য প্রাণ দেব। আর না হলে সেই মিত্রটির খুঁজ পাব যে দেশমাতার হিতে এত বড় সমাচারটি পাঠাল।

ওদিকে গভীর অরণ্যে, অক্ষমালা জনপদটিতে সুধামেল সহ কয়েকজনের সাথে বসে রাজা পরবর্তী পরিকল্পনা পর্যালোচনা করছিলেন। সূর্য বেশ তপ্ত হতে শুরু করেছে। হঠাৎ ফর্ ফর্ করে উড়ে এসে একটি গিরিবাজ সুধামেলের কাঁধে বসে খুশিতে তার ডানা ঝাপটাতে লাগল। এই ঘটনায় থতমত খেয়ে উঠল সুধামেল। মুহূর্তেই সে চিনে ফেলল তার কলিকাকে। এ ও বুঝতে বাকী রইল না যে, গত রাতের সংকেত সঠিক জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে আর সেই সংকেতের জবাবও এসে গেছে। আদর করে কলিকাকে হাতে নিয়ে তার পায়ের মাদুলিটি খুলল সুধামেল। মাদুলিটির ভীতর থেকে সন্তর্পণে বের করল শাল পাতাটি । লেখাগুলি পড়ে তার চোখ যেন আগুনের মত লাল হয়ে গেল, জোরে জোরে শ্বাস চলতে লাগল তার। অতি গম্ভীর মুখে রাজার দিকে শাল পত্রটি বাড়িয়ে দিল সে। রাজা বিস্ময়ে লেখাগুলি পড়তে লাগলেন - প্রথম পঙক্তিগুলির কিছুই বুঝলেন না তিনি। কিন্তু শেষের কথাগুলি পড়ে উনার চেহারা থমথমে হয়ে উঠল। তিনি বুঝতে পারলেন তাকে ধরতে তার পোষা পায়রাটিকেই খুব দক্ষতার সাথে ব্যবহার করছে শত্রু। আর লুকিয়ে থাকা যাবে না। জীবন মরণের সম্মুখ সমরে উপস্থিত তিনি। দুশ্চিন্তা-র মেঘ ছেয়ে গেল রাজার মুখে। কিন্তু কী দুর্ভাগ্য, ঠিক ঐ সময়ই আরও একটি ঘটনা ঘটল। পায়ে সোনার কড়া পড়া আরেকটি হৃষ্ট-পুষ্ট ধবধবে সাদা পায়রা উড়ে এসে রাজার কুলে বসল। খুশিতে পায়রাটি এদিক ওদিক তাকাতে লাগল আর বক্-বকম্-বক্-বকম্ করতে লাগল। হায়রে সে জানে না তার খুশি কত বড় বিপদ ডেকে আনল।

ক্ষণিকের মধ্যেই যেন সব কিছু উথাল-পাথাল হয়ে গেল। শত্রু এত দ্রুত তাদের পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেবে তা কল্পনাও করা যায় নি। নিজেদের সুরক্ষার জন্য কোন পরিকল্পনা করার সময়ই পেল না সুধামেল। আর যেখানে তাৎক্ষনিক মৃত্যু জীবনকে কোন সুযোগই দেয় না, সেখানেই বীরত্ব আর পরাক্রম সামনে এসে দাঁড়ায়। অতি দ্রুত একটি তীক্ষ্ণ অনুনাসিক ধ্বনি করতে করতে ঘর থেকে বেরিয়ে এল সুধামেল। সেই ধ্বনি ছড়িয়ে পড়তেই, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দেহরক্ষীরা এক নিমেষের মধ্যে তাদের নিজ নিজ অবস্থান নিয়ে নিল। চোখের পলকে রাজাকে ঘিরে একটি দুরূহ চক্রব্যূহ রচনা করে ফেলল ওরা। অতি তৎপরতায় রানী এক সাধারণ রমণীর বেশে জনপদের বাকী শিশু আর রমণীদের সাথে নিয়ে পাশের জঙ্গলে প্রবেশ করে গেলেন। এই স্বল্প সময়েই কেউ যেন অরণ্যটিকে চানকে দিল।

রাজশ্রেষ্ঠ-র আদেশে জনপদের হাতিয়ারের ভাণ্ডার খুলে দেওয়া হল। বিষ মাখানো তীর, বল্লম, টাঙ্গি, তলোয়ার, দা, কাতানে সারা অরণ্য ছেয়ে গেল। প্রায় বিশ জন দেহরক্ষীর সাথে যুক্ত হল ঐ জনপদের আরও প্রায় শ-খানেক যোদ্ধা। সম্মুখ সমরের জন্য সবাই প্রস্তুত হয়ে রইল। তবে সরাসরি যুদ্ধের আগে গুপ্ত আঘাতে আঘাতে শত্রুকে ছিন্ন ভিন্ন করে দিতে হবে। এমন অকস্মাৎ হামলা করতে হবে যেন শত্রু হতভম্ব হয়ে যায় - ছত্রখান হয়ে পড়ে। ঐ অবস্থায় তাদের ছন্দপতন ঘটাতে কোন অসুবিধা হবে না। তবে মনে রাখতে হবে শত্রুরাও যথেষ্ট তৈরিই থাকবে। অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে বীরত্ব দেখিয়ে নিজের প্রাণ দেওয়ার চেয়ে শত্রুর প্রাণ নেওয়ার উপরেই জোর দেওয়া হল। গভীর অরণ্যের মধ্য দিয়ে ঐ অক্ষমালা জনপদ অভিমুখী সম্ভব্য পথ-উপপথ গুলিতে শত্রুর উপর গুপ্ত ঘাতক আঘাত হানতে এক দল দেহরক্ষী তৈরি হয়ে রইল। ওরা উপচ্ছায়ার মত অরণ্যের তরুলতাগুল্মাদির সাথেই মিশে গেল। এক বিশাল সেনার সাথে সম্মুখ সমরে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী, কিন্তু শত্রুরা বুঝবে পরাক্রম কাকে বলে! এই বিশ জন দক্ষ দেহরক্ষী হাজার খানেক সাধারণ সিপাহির সমান। যেকোনো সময় অতি গভীর অরণ্যের এই ক্ষুদ্র জনপদটি একটি রক্তক্ষয়ী রণক্ষেত্রে পরিণত হয়ে যেতে পারে। সব কিছুই তৈরী, শুধু প্রথম আঘাতের অপেক্ষা।

মরণ বাঁচন যুদ্ধের সেই মুহূর্তটি বিন্দু বিন্দু করে তিলে তিলে পার হতে লাগল। আজ নিজের সকল শক্তি-সাহস, সকল পরাক্রম নিজেরই মধ্যে সমাবিষ্ট করে যোদ্ধারা চরম সাহসিকতায় নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর হয়ে রইল। " প্রাণ থাকতে যেন একজন শত্রুও আমাকে অতিক্রম করতে না পারে। আর মরার আগে শত্রুর মৃতদেহের বাগান সাজিয়ে দিতে হবে।" - এই তাদের মূলমন্ত্র।

অপেক্ষা লম্বা হতে লাগল। কিন্তু শত্রুর দেখা পাওয়া গেল না। অপেক্ষা করতে করতে বিপক্ষ যখন অধৈর্য হয়ে যায় তখন সেই অধৈর্য আর অসতর্কতার সুযোগে মোক্ষম মৃত্যুর আঘাত করার রণকৌশল চিরকালই একটা ছিল। এ ক্ষেত্রেও কী তাই হল? সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকাল, তারপর সন্ধ্যা হয়ে এল। এভাবে চার-সন্ধ্যা পার হয়ে গেল। তবু শত্রুর দেখা পাওয়া গেল না।

নাহ্ - শত্রু এল না। অবশেষে ভোর বেলা থেকে কিছু সময় পর পর অতি সতর্কতায় ধাপে ধাপে যোদ্ধাদের স্বাভাবিক স্থানে ফিরিয়ে আনা হল - এ কাজ সম্পন্ন করতে করতে দুপুর পেরিয়ে গেল। পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হলেও কিছু যোদ্ধাকে কড়া পাহারায় রাখা হল। চারিদিকেই উত্তেজনার এক চরম সতর্কতা বজায় রইল।

পরের দিন সকালে এক কুঠিরে সুধামেল রাজার সাথে দেখা করল। রাজা সুধামেলকে প্রশ্ন করলেন - এ কী ঘটল সুধামেল? ঐ শালপাতাটিতে কী মিথ্যা সমাচার ছিল? তবে শত্রুর দেখা পাওয়া গেল না কেন? কোথায় হল ভুলটা? নাকি কেউ আমাদের সাথে খেলা খেলছে? এমন ধৃষ্টতা করার দুঃসাহস কে করল?

সুধামেল অতি বিনীত ভাবে বলল - রাজশ্রেষ্ঠ, ঐ সমাচারটি আসার একটু পরেই যথাসময়ে আপনার পোষা পায়রাটি কিন্তু এসে গিয়েছিল। তা থেকে বুঝা যায় ঐ শালপাতাটির কোন কিছুই ভুল ছিল না। শত্রু নিশ্চয়ই তাদের পরিকল্পনা শুরু করেছিল। কিন্তু কোনও কারণে তাতে সফল হতে পারে নি। কিছু একটা নিশ্চয় ঘটেছে রাজপ্রাসাদে। কী ঘটেছে - তা তো আমি জানি না। তবে আমি জানি এই সমাচারটি কে পাঠিয়েছে? এই সমাচারটি কাপট্যকানাত পাঠিয়েছে - তার সাথে যুক্ত আছে পদ্মবীণাও। আমার মন বলছে, হোক না হোক নিশ্চয়ই ওরা দু-জন এমন কিছু চাল চেলেছে যার জন্য লক্ষ্যে পৌঁছার আগেই শত্রু পথ ভ্রষ্ট হয়ে গেছে। খুব শীঘ্রই এর জবাবটাও এসে যাবে আর তখন কারণটাও আমাদের সামনে পরিষ্কার হয়ে যাবে।

রাজা সম্মতিসূচক একটি বাক্য বের করে মাথা নাড়লেন, বললেন - হুঁ! বুঝলাম, তেমনটাই হয়ে থাকবে। তবে ঐ পাতাটির প্রথম পঙক্তিগুলিতে কী লেখা আছে?

রাজার কথা শুনে সুধামেলের মুখে এক টুকরো হাসি ফুটে উঠল। সে শালপাতাটি হাতে নিয়ে পঙক্তিগুলি আবার রাজাকে পড়ে শোনাল।
"রাত হল অন্ধকার
জগতে জয় জয়কার।।
গুপ্ত কিছু কথা রয় -
রুগীর পাশে কে কয়?"

রাজা জিজ্ঞাসু নেত্রে চেয়ে থেকে বললেন - আমি এই উদ্ভট কবিতার কিছুই বুঝতে পারলাম না সুধামেল। কী সমাচার লুকানো আছে এতে?

- হে রাজশ্রেষ্ঠ! এতে দেশদ্রোহী বিশ্বাসঘাতকদের মধ্যমণির নাম লেখা আছে। সেই কুচনি-পুত্রকে চিহ্নিত করতেই এই ছন্দ। সেই দেশদ্রোহী কুজাতের অতি উচ্চ-আকাঙ্ক্ষার ফলেই আমাদের দেশমাতার এত বড় সর্বনাশ হয়েছে, এত দেশবাসীর প্রাণ যাচ্ছে, আমরা আমাদের ভাই-বোনকে হারাচ্ছি। এই ঘোর বিপদের জন্য একমাত্র এই কুলাঙ্গারই দায়ী।

রাজা অধৈর্য হয়ে হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন - কে সেই পামর, কে সেই উপসুন্দ- যে নিজের উদান নিজেই বিনষ্ট করতে চায়?

- রাজগুরু।

রাজা যেন হঠাৎ কথাটা বিশ্বাস করতে পারলেন না। তিনি আরও একটু গাঢ় মনোযোগ সহকারে বললেন - কে? কী বললে তুমি?

- হে রাজশ্রেষ্ঠ! সেই খেঁকিকুত্তা আর কেউ নয় - আমাদের রাজগুরু।

রাজা সুতীক্ষ্ণ হিংস্র রক্তিমা চোখে সুধামেলের দিকে তাকিয়ে ভারী সুরে বললেন - তুমি নিশ্চিত! কোথাও কিছু ভুল হচ্ছে না তো? রাজগুরু এমন কাজ করলেন?

সুধামেল শালপাতাটি রাজার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল - প্রতিটি বাক্যের প্রথম অক্ষর এক করে দেখুন রাজশ্রেষ্ঠ।

রাজা ভাল করে দেখলেন, পরিষ্কার লেখা - রাজগুরু। ক্রোধে উনার মুখমণ্ডল লাল হয়ে উঠল, যেন চোখ দিয়ে বিজলী ঝরছে। যেন এখুনি পায়ের তলায় পিষে মারতে চান সে চর্মচটিকাকে। দুই হাতে তার বুকের হৃৎপিণ্ডটা উপড়ে ফেলতে চান - কিন্তু নিরুপায়। রাগে উনি থরথর কাঁপতে লাগলেন। তেমনি গম্ভীর স্বরে বললেন - এই সমাচার কে সংগ্রহ করেছে?

- পদ্মবীণা। সেইই এই সমাচার সংগ্রহ করেছে। যখন আমাদের কাছে বিশ্বাসঘাতকতার খবর এল, তখন আমি আর সেনাপতি পল্লবসেন পরামর্শ করে গোপনে পদ্মবীণাকে ডেকে পাঠাই আর তাকে এই গুরু দায়িত্ব দিয়ে দেই। আমরা চেয়েছিলাম দেশদ্রোহী উপ-রত্ন আর পরগাছাদের নাশের আগে, বিশ্বাসঘাতকের মূল বিষবৃক্ষটিকেই ঝাড়েবংশে উপড়ে ফেলে দিতে। অন্যদিকে রাজপ্রাসাদ ছেড়ে গুপ্ত কন্দরে প্রবেশের আগে আমি শতরূপা-র সাথে দেখা করি আর তাকে কাপট্যকানাতের কাছে একটি বার্তা পাঠানোর দায়িত্ব দিয়ে আসি। যথাসময়ে শতরূপা সে বার্তা কাপট্যকানাতের কাছে পাঠায় আর কাপট্যকানাতও পরে সেই বার্তা পদ্মবীণা-র কাছে পৌঁছে দেয়। আর তার ফল-স্বরূপ এই জবাব আসে। তবে রাজশ্রেষ্ঠ-র পোষা পায়রা নিয়ে যে রণনীতিটি শত্রুরা তৈরি করেছিল, তার কুট-পরামর্শ কে দিয়েছিল - কী করণে ওরা পথ ভ্রষ্ট হল - এর বিস্তৃত বিবরণ আমার অজানা। তবে আমি আশা রাখি খুব শীঘ্রই এই কুহেলিকা পরিষ্কার হয়ে যাবে।

রাজা একটু পায়চারি করতে করতে নিজের মনেই বললেন - হুঁ! বুঝলাম। কিন্তু কী হয়েছিল রাজপ্রাসাদে?
Next Part

Previous Parts: 1st Part    2nd Part    3rd Part   

## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717
All Bengali Stories    22    23    24    25    26    27    (28)