Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য


ত্রিপুরার বাংলা গোয়েন্দা গল্প


All Bengali Stories    22    23    24    25    26    27    28    29    30    31    (32)     33      

-হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর - ১৩, আগরতলা, ত্রিপুরা ( পশ্চিম )

প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য
( ত্রিপুরার বাংলা গোয়েন্দা গল্প )
রাজবংশী সিরিজের তৃতীয় গোয়েন্দা গল্প
- হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর, আগরতলা
১০-০৩-২০১৮ ইং



আগের পর্ব গুলি: ১ ম পর্ব    ২ য় পর্ব    ৩ য় পর্ব    ৪ র্থ পর্ব   


◕ প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য
৫ ম পর্ব

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------

কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা কালি'র বাড়িতে এসে উঠল। বেশ বড় বাড়ি, তবে ছন্নছাড়া, লক্ষ্মীছাড়া। দেখলেই বুঝা যায়, মা লক্ষ্মীর ছায়া দীর্ঘকাল এ বাড়িতে পড়েনি। বাড়ি ত নয়, যেন দণ্ডকারণ্য, এক তিলেখচ্চরের বন। রাক্ষস-কোক্কসের গন্ধ-বাতাস শরীর মনকে ভারী করে দিয়ে যাচ্ছে। "অরণ্য ছাড়া কি আর রাক্ষসীরা থাকতে পারে?" নিজের অজান্তেই কথাগুলি বেড়িয়ে এল নবদ্বীপ চক্রবর্তীর মুখ থেকে। বাড়িতে একটি মাত্র ঘর। ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে রাজবংশী জোর গলায় ডাকল, "শুনছেন, কেউ কী ঘরে আছেন?" ডাক শুনে ঘর থেকে বের হয়ে এল কালি, "কে?"

ঘর থেকে বের হয়েই রামকে সামনে দেখে সে আঁতকে উঠল। খুব তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, "কী রে রাম? কী হল? বনশ্রীর কিছু খোঁজ পাওয়া গেছে?"

কেউ কিছু বলার আগেই রাজবংশী কর্কশ সুরে জবাব দিল, "তার খোঁজ তো আপনি আমাদের দেবেন। ভিতরে চলুন, আপনার সাথে আমার অনেক কথা আছে?"

নিজের স্বরূপে কালি খ্যাঁন-খ্যাঁন করে উঠল, "মানে! কী বলতে চান? কে আপনি?"

কালি'র কথায় কোন ভ্রুক্ষেপ না করে সোজা ঘরের ভিতরে ঢুকে গেল রাজবংশী । ঘরে ডুকে বলল, "পুলিশের লোক। আপনার বক-বক যন্ত্রটাকে একটু থামান। তা না হলে বনশ্রীকে অপহরণের অপরাধে সোজা ভিতরে ঢুকিয়ে দেব।"

কথাটি শুনেই মুখ কালো হয়ে গেল কালি'র। মিনমিন করে বলল, "এ কী বলছেন স্যার? বলুন আমি আপনার জন্য কী করতে পারি?" রাজবংশীর পিছু-পিছু বাকীরাও ঘরের ভিতরে প্রবেশ করল। ঘরের দরজা জানাল সব বন্ধ, একটি গুমট অন্ধকার, স্যাঁতসেঁতে ভাব, বাসি তরকারির পচা গন্ধ। নাকে রুমাল চাপা দিয়ে রাজবংশী বলল, "রাম, দরজা জানালাগুলি খুলে দাও তো।" সাথে সাথেই সদানন্দ আর রাম সকল দরজা জানালা খুলে দিল। কিছু নির্মল, কিছু মুক্ত আলো বাতাস হু-হু করে ঘরে ঢুকল। ভাল মানুষ যেখানেই যায়, ভাল কিছু তার পিছু-পিছু ধায়। নিজ গুনে সৎ নিষ্ঠাবান লোকেরা নিজের চারিদিক ভাল করে তুলে, প্রাচীন প্রবাদ। এখানেও তাই হল। গুমট অন্ধকার ঘরটি তাজা আলো বাতাস পেয়ে আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে জেগে উঠল। সেই আলো বাতাসে ঘরের এক কোনে একটি ছোট্ট নতুন ফ্রিজ দেখা গেল। ফ্রিজটি দেখে রাজবংশী ভ্রু কুচকে বলল, "আপনার ঘরে তো দেখছি কারেন্ট নেই, তবে ফ্রিজ কেন? ওটা কী দিয়ে চলে?"

এ কথা শুনে কালি ছেবরা খেয়ে উঠল। বাকিরাও ফ্রিজটির দিকে ফিরে তাকাল। সত্যিই তো একটা নতুন ফ্রিজ। এখনো ঠিক করে প্যাকেট থেকে খোলা হয়নি। কালি'র জবাব না পেয়ে রাজবংশীর প্রশ্নটি আবার উড়ে এল, "কী হল? বলুন কাকলি-দেবী! আপনার ঘরে তো কারেন্ট নেই, তবে ফ্রিজ কেন? ওটা কী দিয়ে চালান?" রাজবংশীর কথা শুনে কালি জবাব খুঁজতে লাগল, আমতো-আমতো করতে লাগল। কিন্তু কিছুই জবাব খুঁজে পেল না। রাজবংশী কালি'র জবাবের অপেক্ষা না করে ফ্রিজটির কাছে চলে গেল। বলল, "দেখি তো, আপনি এই ফ্রিজের ভিতরে কী রেখেছেন?" বলতে না বলতেই ঝটপট সে ফ্রিজের দরজা খুলে দিল। কালি হৈ-হৈ করে উঠলেও কিছুই করতে পারল না। ফ্রিজের ভিতরের জিনিসটি দেখে রাজবংশীর চোখ বড়-বড় হয়ে গেল। প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা দামের এক মোবাইল ফোন। ফ্রিজের থেকে সেই মোবাইল ফোনের দাম বেশী। "ওরে বাবা, এ যে দেখছি রাজা-মহারাজাদের ফোন, তা ও ফ্রিজের ভিতরে! ফ্রিজের ভিতরে ফোন রাখতে এই প্রথম দেখলাম। বাঃ-বাঃ, বেশ- বেশ।" কালি কিছু বলার আগেই রাজবংশী ফোনটি হাতে নিয়ে বিস্ময়ে বলে উঠল, "চমৎকার! প্রথমেই মহিষাসুর ঘোষালের নাম! নামের সাথে ছবিও। ভারি ইন্টারেস্টিং।" মোবাইল ফোনটি দেখতে-দেখতে হঠাৎ সে জোরে-জোরে একটি ফোন নম্বর বলতে লাগল। সদানন্দ খুব ভাল জানে তাকে এখন কী করতে হবে। সে ঝটপট নিজের ডাইরিতে নম্বরটি লিখে নিল। কিন্তু এ কী? নম্বরটি যে চোদ্দ সংখ্যার। ফোন নম্বর তো দশ সংখ্যার হয়? তবে বাকী সংখ্যা গুলি কোথা থেকে এল? সদানন্দ বুঝে গেল, মাছ ধরার জাল পাতা শেষ, এবার প্রতীক্ষা। ঠিক এই সময়েই সদানন্দর মোবাইলে একের পর এক মেসেজ আসতে শুরু করল। সবার অখলে রাজবংশী চোখ টিপ মারলেন সদানন্দকে। সদানন্দ বুঝে গেল নিজের কাজ। মোবাইল আর ফ্রিজ ছেড়ে ঘুরে দাঁড়াল রাজবংশী। রুক্ষ গলায় বলল, "মহিষাসুর ঘোষালের সাথে আপনার পরিচয় কত দিনের কাকলি-দেবী?"

কালি এবার নিজের সকল দুর্বলতা ছেড়ে কড়া প্রতিরোধে নেমে এল। নিজেকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা। বলল, "কেন? কী দরকার আপনার?"

রাজবংশী রাখ-ঢাক না রেখে সরাসরি পরের প্রশ্নটি করল, "কাজটির জন্য মহিষাসুর আপনাকে কত টাকা দিয়েছেন?"

গলা বেশ চড়িয়ে দিল কালি। বলল, "টাকা? কিসের টাকা? কোন কাজ? তখন থেকে আপনি যা খুশি তাই বলে যাচ্ছেন মিস্টার! আপনি জানেন না আপনি কাকে কী বলছেন?"

রাজবংশী মাথা ঠাণ্ডা রেখে আবার আগের প্রশ্নটি করল, "এই কাজের জন্য মহিষাসুর ঘোষাল আপনাকে কত টাকা দিল?"

দাঁত কটমট করতে-করতে কালি বলল, "আপনি তো মশাই একের পর এক সীমা ছাড়িয়েই যাচ্ছেন! মুখে যা আসছে তাই বলে যাচ্ছেন! আপনি যদি পুলিশের লোক না হতেন তবে -।"

রাজবংশী দুই কদম এগিয়ে এসে অগ্নি-ঝরা চোখে কালি'র চোখে চোখ রাখল। বলল, "যদি পুলিশের লোক না হতাম তবে আমাকে কী করতেন, কাকলি চক্রবর্তী? বলুন? শুনি একবার! আমি পুলিশের লোক নই, তবে নকল পুলিশও নই। খুব শীঘ্রই আসল পুলিশ এখানে আসছে। বনশ্রী ঘোষালের অপহরণ কাণ্ডে আপনি যে জড়িত এ কথা জানতে আমার আর বাকী নেই। আপনি কোন গুরুর তিলকধারী তা আমি জেনে গেছি। আপনার মোবাইল ফোন আর আপনার ব্যাঙ্কের একাউন্ট সে কথা বলে দিচ্ছে। অপরের টাকায় দামী মোবাইল ফোন তো কিনলেন, কিন্তু চালাতে জানেন? গত মাস খানেকের মধ্যে আপনার ব্যাঙ্কে যে তিন-তিন বার এক লক্ষ, এক লক্ষ্য করে তিন লক্ষ্য টাকা জমা পড়েছে তার খোঁজ নিতে ইনকাম ট্যাক্সের লোকও খুব শীঘ্রই আসছে। এক মাসের মধ্যেই কোথা থেকে পেলেন আপনি এত টাকা? আপনার মত এক বেকার মেয়ের খাতায় এত টাকা কীভাবে জমা পড়ল, তার খোঁজ নিতে হবে। আমাকে কিছু বলার দরকার নেই, পুলিশকেই তখন সব বলবেন। খুব শীঘ্রই আপনার সাথে আমার আবার দেখা হবে। জেনে রাখুন, এইবার খুব ফেঁসে গেছেন আপনি। অপহরণের দায়ে জেল হাজত তো আলাদা, কর ফাঁকির অপরাধের সামনাও করতে হবে। মূর্খদের গা-জোরামি যে সব জায়গায় চলে না, সে কথাটা হয়তো আজ পর্যন্ত আপনাকে কেউ বলেনি। তাই ঢোল পিটিয়ে আমিই বলে গেলাম। জেনে রাখুন, বনশ্রী ঘোষাল অপহরণ কাণ্ডের আপনিও একজন আসামী। কথাটা এখন মুখে মুখেই বলে যাচ্ছি। প্রমাণ-সাক্ষী দিয়ে তবে জেলে ঠুসব, কথা দিলাম। চলি। নমস্কার।"

ধাই-ধাই করে রাজবংশী ঘর থেকে বের হয়ে গেল। পিছন পিছন বাকীরাও বেরিয়ে গেল। রাজবংশীর কথা শুনেই গলা শুইয়ে এল কালি'র। তবে সে ও কি আর ছেড়ে দেবের পাত্রী! কাল সাপের কি আর বিষের অভাব হয়? দুষ্ট লোক হাজার ছলনা করতে পারে, কিন্তু শেষে নিজেই মরে।

ওদিকে পথ চলতে চলতে সদানন্দ ভাবতে লাগল, "রাজ, এটা কী করল? সব জেনে শুনে কালিকে ছেড়ে দিল? একটি আসামীকে এভাবে ছেড়ে দেওয়া মোটেই উচিত হয়নি রাজের। কালি যদি বনশ্রী ঘোষাল অপহরণ কাণ্ডের আসামীই হয়ে থাকে, তবে তার বাড়িতে দাঁড়িয়ে পুলিশকে ফোন করলেই তো চলত! পুলিশ এসে তাকে ধরে-বেঁধে নিয়ে যেত। এভাবে কালিকে ছেড়ে দেওয়া মোটেই উচিত হয়নি রাজের। এখন কী আর কালিকে ধরা যাবে? এখুনি তো পাখি ফুড়ুৎ!" সদানন্দ কথাটা জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিল, রাজবংশী হাত তুলে থামিয়ে দিল। উল্টো রাজবংশী চোখ দেখে সদানন্দ ঘাবড়ে গেল, "ওরে বাবা, সিনেমা বুঝি এখুনি দেখব?" চুপ চাপ রাজবংশীর পিছু-পিছু চলতে লাগল সে। কিছুদূর চলার পর রাজবংশী হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল, নিজের পকেট থেকে কিছু টাকা বের করল। রামের হাতে দিল। বলল, "যাও, আমতলী বাজার থেকে কিছু সবজি-টব্জি কিনে নিয়ে আসো। খুব খিদে পেয়েছে। সকাল বেলা থেকে কিছু খাওয়া হয়নি। আজ এখানেই রান্না-বান্না করে খাওয়া হবে।"

রাজবংশীর হাত থেকে টাকা নিতে খুব লজ্জা বোধ করতে লাগল রাম। নবদ্বীপ চক্রবর্তী এগিয়ে এলেন। বললেন, "এ তুমি কী করছ রাজ? আজ তুমি আমাদের ঘরে অতিথি। তুমি কেন টাকা দিতে যাবে? না! না! এ হয় না, এ টাকা তুমি ফেরত নাও। আমি বাজারে যাচ্ছি। দেখি কী আনতে পারি।"

রাজবংশী কড়া সুরে বলল, "এখন কথা বাড়াবেন না কাকা, যা বলছি শুনুন। রামকেই বাজারে যেতে হবে। রাম, তুমি বড় পথ ধরে হেটে-হেটে বাজারে যাবে আবার হেটে-হেটেই আসবে। কথার যেন খেলাপ না হয়। কথা শেষ, যাও।"

রাজবংশী এই রুক্ষ ব্যাবহারে মন খারাপ হয়ে গেল বুড়োর। তিনি মাথা নিচু করে একপাশে দাঁড়িয়ে রইলেন। কিন্তু সদানন্দের বুকটি ধক-ধক করতে লাগল, "সিনেমা! সিনেমা!"

আর কোন কথা না বাড়িয়ে টাকা হাতে রাম হেটে-হেটে আমতলী বাজারের দিকে রওনা দিল। অন্যদের সাথে নিয়ে রাজবংশীও ধীর পায়ে বাড়ির পথে পা বাড়াল। কিন্তু সামান্য একটু পথ এসেই আবার থমকে দাঁড়াল। পিছন ফিরে তাকাল। যেন আগুন ঝরে পড়ছে তার চোখ দিয়ে। রাজবংশীর সাথে সাথে বাকীরাও পিছন ফিরে তাকাল। দেখল, ঐ তো রাম মাথা নিচু করে হেটে-হেটে যাচ্ছে। কিন্তু এ কী? হঠাৎ রামের পিছনে একটি সাদা মারুতি ভ্যান উল্কার মত এসে থামল। কয়েকজন লোক ভেল্কি খেলার মতো গাড়ি থেকে নেমে রামের মুখ চেপে ধরে তাকে গাড়িতে তুলে নিল। আবার উল্কার মত ছুটে চলল গাড়িটি। রাজবংশীর পাশে দাঁড়িয়ে নবদ্বীপ চক্রবর্তী চীৎকার করে উঠলেন, "রাম! রাম! ওরা আমার রামকে নিয়ে যাচ্ছে!" রামকে বাঁচাতে তিনি দৌড়তে শুরু করলেন। রাজবংশী পিছন থেকে উনার হাত টেনে ধরল, তপ্ত গলায় বলল, "কাকা! কাকা! শুনুন, আপনি শান্ত হওন। রামের কিচ্ছু হবে না, পুলিশ সামনে আছে। গাড়িটির নাম-নম্বর সব দিয়ে আগেই পুলিশকে খবর দেওয়া হয়ে গেছে। আপনি কিচ্ছু ভাববেন না। পুলিশ আছে, আমি আছি। কোন চিন্তা নেই। আমি থাকতে আমার সামনে দিয়ে আমার রামকে অপহরণ করে নিয়ে যাবে! হা-হা! ওরে মহিষাসুরের দল, তোরা সীতাকে তো অপহরণ করলি, এবার রামকেও অপহরণ? বুঝ তবে ঠেলা।"

রাজবংশীর কথা শেষ হতে না হতেই পিস্তলের গুলির শব্দ শোনা গেল, সাথে প্রচণ্ড হৈ-চৈ। সদানন্দ খুব চিন্তিত স্বরে বলল, "রামের কিছু ক্ষতি হয়নি তো রাজ?"

রাজবংশী এক বীরের মত জয়ের হাসি হেসে বলল, "কিছু ভেবো না সাধুদা। রামের কোন ক্ষতি হবে না। ওখানে থানার ওসি বিবেক দেবরায় আগে থেকেই পুলিশ ফোর্স নিয়ে উপস্থিত আছেন। গাড়িটি আটকাতে হয়তো ফায়ারিং করেছেন। আর অপরাধীরা ধরা পড়তেই বাজারের লোক মিলে গণধোলাই দিল, তাই এত হৈ চৈ।"

    "অবাক কাণ্ড! তুই আগে থেকেই সব জানতি? এই একটু সময়ে এত কিছু কী ভাবে এরেঞ্জ করলি?"

    "আরে সাধুদা! ঘটনাটি আর কিছু নয়, আমি অপরাধীদের ধরতে, অপরাধীদের দ্বারাই বনশ্রী ঘোষাল অপহরণ কাণ্ডটি রিপিট করিয়েছি মাত্র। তবে এবার সব ছিল আমার চিত্রনাট্য অনুযায়ী, আমার প্ল্যান অনুসারে। এই খবর আমি জানলেও অপরাধীরা জানত না। তারা আরামসে নিজের অজান্তেই আমার ফাঁদে পা দিয়ে বসল। কালিকে দিয়েই বাকিদের ধরতে, সব জেনে বুঝে কালিকে খালি ছেড়ে এসেছিলাম। আর তার ফল হাতে নাতে পেলাম।"

বেশ অবাক হয়ে গেল সদানন্দ, "কেমন? ঠিক বুঝলাম না!"

রাজবংশী বলতে শুরু করল, "আমরা কিছুক্ষণ আগে যখন এই পথ ধরে কালি'র বাড়িতে যাচ্ছিলাম তখন একটি বাড়িতে একটি সাদা মারুতি ভ্যান দেখতে পাই। সেটিকে দেখে কেন জানি মনে হল, লতা পাতার আড়ালে গাড়িটিকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম একটি লোক রামকে দেখে টপ করে গাড়ির পিছনে লুকিয়ে গেল। আরেকটি লোক দ্রুত পায়ে ঘরের ভিতরে ঢুকে গেল। খুব সন্দেহ হল আমার। গাড়িটির নম্বর দেখে নিলাম। ঐ বাড়িটির দিকে লক্ষ্য রাখতেই রামকে আমাদের পিছনে একটু দূরত্ব রেখে হাটতে বললাম। পথ চলতে-চলতে কয়েকবার রামকে ডাকার বাহানায় পিছন ফিরে দেখলাম একটি লোক বিড়ি খেতে-খেতে আমাদের উপর ঠিক নজর রাখছে। মনে হল, এখানে ভেজাল তো কিছু একটা আছেই। এবার আসি কালি'র কথায়, রামের মুখ থেকে কিছুক্ষণ আগে সব শুনে আমার মনে হল কালিই এই রহস্য উদ্ঘাটনের আসল দরজা। পাশাপাশি এ ও মনে হল, যদি কালি টাকার জন্য এই কাজ করে থাকে তবে নিশ্চয়ই সেই টাকার ছিটা-ফুটা গন্ধ তার ঘরের মধ্যে থাকবেই থাকবে। আর তা খোঁজ করতেই তার বাড়িতে আমাদের যাওয়া। কিন্তু সেখানে গিয়ে তো দেখি মনে-মনে যা চেয়েছিলাম তার থেকে ঢের বেশী পড়ে আছে ঐ বাগানে। প্রথমেই নতুন ফ্রিজটি চোখে পড়ল। বাড়িতে কারেন্ট নেই অথচ নতুন ফ্রিজ কিনে নিয়ে এলো? সেটি কী কাজে লাগবে? তাছাড়া ঐ রকম একটি নরকে ফ্রিজটি বেশ বেমানান লাগছিল। বেশ উৎসুকতা নিয়ে ভাবলাম, দেখি এই বন্ধ ফ্রিজে কী রাখল কালি? ভাই-রে-ভাই, ফ্রিজের মধ্যে মোবাইল ফোন রাখতে এই প্রথম কাউকে দেখলাম, তাও এত দামী মোবাইল ফোন। যাক, ফোনটি হাতে নিয়েই দেখি তার মধ্যে প্রচুর SMS, একটিও পড়া হয়নি। ব্যাস পড়তে শুরু করলাম। এক দু'টি SMS খুলতেই ব্যাঙ্কের লেন-দেনের হিসাব ঝল-ঝল করে উঠল। সাথে সাথেই সবগুলি তোমার মোবাইলে ফরোযার্ড করে দিলাম। আসলে, মহিষাসুরের কাছ থেকে টাকা পেয়ে কালি সাথে সাথেই সেগুলি ব্যাঙ্কে জমা করে দেয়। টাকা জমা পড়তেই ব্যাঙ্কের SMS তার মোবাইলে চলে আসে। কিন্তু সেই মূর্খ, SMS পড়তেই জানে না, খুলতেই জানে না। আর আমি করলাম কী, এই SMS গুলি তোমাকে ফরোয়ার্ড করার সাথ-সাথে ওসি বিবেক দেবরায়কেও ফরোয়ার্ড করে দিলাম। এর পরে মনে হল, দেখি মোবাইলটিতে কার-কার ফোন নম্বর সেভ করা আছে? প্রথম নামটি খুলতেই দেখি নামটির পাশে সেই মারুতি গাড়ির নম্বর। M টাইপ করতেই দেখি মহিষাসুর ঘোষালের নাম। P টাইপ করতেই দেখি পটভবেশের নাম। আর কিছু বুঝতে কী বাকী রইল? একপ্রকার ধারনা হয়ে গেল, হোক না হোক এই মারুতি গাড়িটি দিয়েই বনশ্রীকে অপহরণ করা হয়েছে। সাথে সাথেই রাম অপহরণের প্ল্যানটি মাথায় এসে যায়। তখনই কালি'র মোবাইল থেকে ওসি সাহেবকে গাড়িটির নাম-নম্বর সব লিখে সংক্ষেপে প্ল্যানটি SMS করে দেই। সেই প্ল্যানের অঙ্গ হিসাবেই আমি খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে কালি'র ভিতরের কাল-নাগিনীটিকে জাগিয়ে দেই। মহিষাসুর ঘোষালের সাথে যে তার সম্পর্ক আছে তা খুলাখুলিই বলে দেই। সে যে একজন আসামী তা ও বলে দেই। এই ধমকিতে খুব কাজ হল। আমরা কালি'র বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসতেই কালি সকল কথা দানবের বনে ছড়িয়ে দিল। ফলস্বরূপ ওরা তেমনটাই করল, যেমনটা আমি চেয়েছিলাম। প্ল্যানটা আগা-গোড়াই মিলে গেল। ওরা রামকে অপহরণ করতে চাইল। সীতাকে অপহরণ করে পাড় পেয়ে গেলেও, রামকে অপহরণের ঠেলা হাড়ে-হাড়ে টের পেল, আগামীতে আরও পাবে।

বিস্ময়ের সুরে সদানন্দ বলল, "তোর কথা সব তো বুঝলাম। কিন্তু একটা প্রশ্ন বারে বারে মনে আসছে। ওরা আবার কেন রামকে অপহরণ করতে চাইল?"

    "ঠিক প্রশ্ন করেছ সাধুদা। ওরা আবার রামকে কেন অপহরণ করতে চাইল? রামকে অপহরণ করতে পারলে ওদের দু'টি কাজ হতো। এক- বনশ্রী ঘোষাল খুনের মামলায় রামকে ফাঁড়ার আসামী ঘোষণা করে দিত। দুই- বনশ্রী ঘোষাল খুনের মামলায় রামের পরিবারকে আরও কঠিন ভাবে ফাঁসিয়ে দিত। এই কথাগুলি আমি আগেই চিন্তা করে রেখেছিলাম, তাই প্রতিরোধটি শক্তপোক্ত করতে কোন অসুবিধা হয়নি।"

সব কথা শুনে বিস্ময়ে সদানন্দ হা করে তাকিয়ে রইল রাজবংশীর দিকে। ঢোক গিলে বলল, "ওরে বাবা! এত সব কাণ্ড ঘটে গেল এরই মধ্যে? আর আমাদের খবরই নেই। আচ্ছা, মনে পড়েছে, আরেকটি প্রশ্ন। আমাকে যে এত বড় একটা মোবাইল নম্বর বললি, সেটা কী?"

হা-হা করে হেসে উঠল রাজবংশী, "আরে ঐ বড় নম্বরটির প্রথম চারটি ডিজিট হল সেই মারুতি গাড়িটির নম্বর। আর মোবাইল নম্বরটি ছিল মহিষাসুর ঘোষালের।"

রাজবংশীর কথা শেষ হতে না হতেই দূরে একটি পুলিশের জীপ দেখা গেল। গাড়িটি এসে সোজা নবদ্বীপ চক্রবর্তীর উঠানে থামল।
পরবর্তী পর্ব

আগের পর্ব গুলি: ১ম পর্ব    ২ য় পর্ব    ৩ য় পর্ব    ৪ র্থ পর্ব   

রাজবংশী সিরিজের অন্য গোয়েন্দা গল্প:

মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   



All Bengali Stories    22    23    24    25    26    27    28    29    30    31    (32)    

## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717