Home   |   About   |   Terms   |   Contact    
RiyaButu
A platform for writers

প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য


ত্রিপুরার বাংলা গোয়েন্দা গল্প


All Bengali Stories    22    23    24    25    26    27    28    29    30    31    (32)     33      

-হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর - ১৩, আগরতলা, ত্রিপুরা ( পশ্চিম )

প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য
( ত্রিপুরার বাংলা গোয়েন্দা গল্প )
রাজবংশী সিরিজের তৃতীয় গোয়েন্দা গল্প
- হরপ্রসাদ সরকার, ধলেশ্বর, আগরতলা
১৪-০৩-২০১৮ ইং



আগের পর্ব গুলি: ১ ম পর্ব    ২ য় পর্ব    ৩ য় পর্ব    ৪ র্থ পর্ব    ৫ ম পর্ব   


◕ প্রেমিকার অন্তর্ধান রহস্য
৬ ষ্ঠ পর্ব

-------- বিজ্ঞপ্তি ----------
■ আমাদের এই ওয়েবসাইট ( RiyaButu.com )-এ প্রকাশিত গল্পগুলির মধ্যে থেকে কিছু গল্প নিয়ে এবছরই প্রকাশিত হবে আমাদের 'রিয়াবুটু'র গল্প'।
--------------------------

দ্রুত পা চালিয়ে নবদ্বীপ চক্রবর্তী, রাজবংশী আর সদানন্দ বাড়িতে উপস্থিত হল। দেখা গেল পুলিশের গাড়িতে মাথা হেট করে বসে আছে কালি। তার পাশে মাথা হেট করে বসে আছে আরও কয়েকজন যুবক। তাদের মধ্যে সেই মারুতি গাড়িটির মালিক মরণ, তার ছোট ভাই গুরুপদ ও আছে। বাজারের লোকদের গণধোলাইয়ে তাদের গাল, চোখ-মুখ ফুলে ফুটবল হয়ে গেছে। রাজবংশীকে দেখেই রাম দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরল আর কাঁদতে শুরু করল। পরম স্নেহে রামের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে রাজবংশী বলল, "কী রে, ভয় পেয়েছিস? আরে আমি আছি না! আমি থাকতে তোর আবার কিসের ভয়? আমিই তোকে বিপদে ফেলব আবার আমিই তোকে বাঁচাব। কিন্তু দেখলি তো, বাজার করতে গিয়ে কী নিয়ে ফিরে এলি? বনশ্রীর অপহরণকারী। আপাতত তোমার কাজ এখানেই শেষ, এবার যাও, বাবার কাছে যাও, উনি তোমাকে নিয়ে খুব চিন্তিত আছেন।"

রাজবংশীর কথা শুনে রাম তার বাবার কাছে যেতেই নবদ্বীপ চক্রবর্তী দুই হাতে জড়িয়ে ধরলেন রামকে, "আমার রাম! আমার রাম!"

রাজবংশী ওসি সাহেবের দিকে এগিয়ে গেল। হাসতে হাসতে বলল, "স্যার, প্ল্যানটা কেমন ছিল?"

ওসি বিবেক দেবরায় রাজবংশীর পিঠ চাপরে বললেন, "ভেরী গুড ইয়ং-ম্যান। ভেরী গুড। I am proud of You. আমি ঠিক এমনটাই চেয়েছিলাম। ঘটনাটি যে ভাবে ঘুরে যাচ্ছে বা ঘুরছে, দেখে মনে হচ্ছে আমরা কেসটির একেবারে ঠিক জায়গাটিতেই হাত দিয়েছি।"

    "তবে দুটি গুলির আওয়াজ পেয়েছিলাম। সেগুলি কীসের জন্য ছিল?"

হা-হা করে হেসে উঠলেন ওসি সাহেব। বললেন, "আরে এই ভাঙ্গাচুরাদের বাগে আনতে প্রথমে শূন্যে, তারপর গাড়ির চাকায় মোট দুটি ফায়ারিং করতে হয়েছিল। অবশ্য পরের কাজটা আমতলী বাজারের লোকেরাই করে দিল। রামকে অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে শুনে বাজারের লোকেরা কী যে উত্তম মধ্যম দিল, তা আর কী বলব। আমরা ইচ্ছা করেই তখন- ।" টুপ করে কথা বন্ধ করে গলা ঝাড়া দিয়ে উঠলেন বিবেক-বাবু। তারপর নিজেই আবার বললেন, " আচ্ছা সে কথা যাক। এখন যাই, ওদের একটু বেশ ভাল করে রগড়া পানি দিয়ে আসল লোকটিকে খুঁজে বের করি।"

রাজবংশী মাথা নেড়ে বলল, "ওকে স্যার, পরে আপনার সাথে দেখা করে এ নিয়ে বিষদ কথা বলব।" এই বলে সে কালি'র সামনে গিয়ে দাঁড়াল। বলল, "কী দিদিমণি, অকালসন্ধ্যায় হাজির হলেন যে। মনে আছে আমার কথা? ঐ যে বলেছিলাম, দিলাম তো রাশিচক্রটাকে ঘুরিয়ে! এলাম তো আসল পুলিশ নিয়ে, আর প্রমাণসহ ঠুসে দিলাম তো জেলে! এবার যান, ঘুরে আসুন। আশা করি খুব খাতিরদারি পাবেন ওখানে। আপনার অকথিত কাহিনী জেলেই পূর্ণ হোক সেই আশাই রাখি।"

কালি আর চোখ তুলল না, মাথা নিচু করেই বসে রইল। রাজবংশীর পিছনে দাঁড়িয়ে নবদ্বীপ চক্রবর্তী বললেন, "তুই ও ওদের দলে যোগ দিলি মরণ? আমি তো তোকে সৎ-মেহনতি ছেলে বলে ভাবতাম! ছিঃ ছিঃ লোকে সত্যি বলে, ষাঁড়ের কাঁধেই মাংসপিণ্ড।"

কোন অপরাধীই আর মাথা তুলল না। রাগে, ঘৃণায় অপহরণকারীদের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে রইল রাজবংশী। দু'জন পুলিশকে নবদ্বীপ চক্রবর্তীর বাড়িতে পাহারায় রেখে গ্রাম শুদ্ধ লোকের সামনে দিয়ে পুলিশের গাড়িটি ভুম-ভুম করে বেরিয়ে গেল। গাড়িটি চলে যেতেই গ্রামের লোক হুমড়ি খেয়ে পড়ল নবদ্বীপ চক্রবর্তীর বাড়িতে। সবাইকে ধীরে-ধীরে বিদায় করল রাজবংশী। তারপর বেলা প্রায় একটায় রামকে সাথে নিয়ে ধলেশ্বর-১৩ নম্বরে নিজ বাড়িতে ফিরে এল। দুপুরের খাওয়া-দাওয়া এক সাথে এখানেই সারল সবাই। খাওয়া-দাওয়ার পর শুরু হল রামের কাছে ঘটনাটির বিষদ জানার পালা।

রামকে রাজবংশী প্রশ্ন করল, "কেন তুমি ১৬ই জানুয়ারিকে তোমার জীবনের শেষ দিন ধরে রাখলে? আর কেনই বা বনশ্রী বলেছিল যে, সে তোমার কাছে ঋণী?"

প্রশ্ন শোনে রামের চোখ দুটি ছলছল করে উঠল। নিজের সব ঘটনা খুলে বলতে শুরু করল সে।

সবে মাত্র স্কুলের পাঠ শেষ করে তখন সে MBB কলেজে ভর্তি হয়েছে। বাবা নবদ্বীপ চক্রবর্তী ছেলেকে কাছে ডেকে বললেন, "রাম! বাবা, এখন পর্যন্ত তো তোর পড়াশুনার জন্য কিছুই করতে পারিনি। যা করেছিস তুই নিজের চেষ্টাতে করেছিস। তুই তোর ক্ষমতা বলেই এত দূর পর্যন্ত এসেছিস। তবে আমি চাই এতদূর পর্যন্ত যখন এসে গেছিস তখন শত ঝড় ঝাপটা এলেও পড়াশুনাটা আর ছাড়িস না। আমাদেরর আশীর্বাদ রইল, তুই সফল ভাবেই তোর পড়াশুনা শেষ করবি। ছেলে-মেয়ে মানুষ হলে মা-বাবার কত যে আনন্দ, কত যে গর্ব তা আমরা তোকে বুঝাতে পারব না। সেই গর্বে, সেই আনন্দে তোর মা তার শেষ গয়না দুটি বিক্রি করে তোর জন্য এই কিছু টাকা জোগাড় করেছে। নে, একটি সাইকেল কিনে নিস বাবা। মনে করবি এটি তোর মা'র আশীর্বাদ। তোকে তো আর কিছুই দিতে পারলাম না, এই সাইকেলটিই যেন তোর জীবনকে গতিময় করে তুলে এই আশীর্বাদ করছি।"

বাবার কথা শুনে চোখ ভরে এল রামের। সে তার বাবাকে হৃদয়ের সমগ্র ভালবাসা উজাড় করে জড়িয়ে ধরল। শুরু হল রামের নতুন জীবন, নয়াবাদী থেকে কলেজটিলা। প্রতিদিন সকালে আধপেটা খেয়ে, কখনো কখনো খালি পেটে প্রায় ১২ কিমি পথ সাইকেল চেপে সে কলেজে আসে। অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে সব ক্লাস এটেন্ড করে। বিকেলে আবার সাইকেল চেপে বাড়ি ফিরে যায়। সব গরিবের একই কাহিনী। বাড়িতে গিয়েই আবার খেতে খামারে কাজ শুরু। অন্যের বাড়িতে দিনমজুরের কাজ শুরু, বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত। গ্রামের কয়েকজন ছেলে-মেয়েকেও পড়ায় সে। এমন ভাবেই ঠেকে-খেয়ে কোন ভাবে সংসার চলছে। তবে চোখে ভবিষ্যতের সুন্দর স্বপ্ন।

ঐ বছর ১৬ই জানুয়ারি, মাঘ মাসের অমাবস্যাতে গ্রামের রাজেন সরকারের বাড়িতে বাৎসরিক কালীপূজা। পুরোহিত হলেন নবদ্বীপ চক্রবর্তী আর তন্ত্রধারক হলেন রাম কুমার চক্রবর্তী। সারা গ্রামের লোক নিমন্ত্রিত। গ্রামের বাইরে থেকেও প্রচুর লোক এসেছেন। বিশাল বাড়ি, বিশাল উঠান। উঠানের একদিকে চলছে নিষ্ঠা ভরে পূজার কাজ। মণ্ডপের সামনে প্রচুর লোক ঢাকের তালে ধুমসে নাচানাচি করছে। আরেক পাশে চলছে খিচুরি খাওয়ার পালা। তখন প্রায় মধ্য রাত। হঠাৎ একটি খুব সুন্দরী, স্মার্ট মেয়ে ঘরের বারান্দা থেকে ধুপ-ধাপ করে মণ্ডপের দিকে এগিয়ে গেল। কথা নেই বার্তা নেই, এত-এত লোকের সামনে রামের গালে ঠাস ঠাস বেশ কয়েকটি চড় বসিয়ে দিল সে। চোখের পলকে গান বাজনা, নাচানাচি, হৈ-হুল্লুর সব থেমে গেল। ঘটনাটি যেন রামের বিশ্বাসই হচ্ছে না। সে ভেবে পাচ্ছে না কী কারণে মেয়েটি এমন কাজ করল, অপরাধটি কী? লজ্জায় তার মাথা হেট হয়ে গেল। গ্রামের মানুষগুলি যেন আকাশ থেকে পড়ল। ঠাসা ভিড় জমে গেল পূজা মণ্ডপের সামনে। নবদ্বীপ চক্রবর্তী মা কালি'র মূর্তিতে জবা ফুলের মালা পড়াচ্ছিলেন। এই কাণ্ড দেখে মালা হাতেই ফিরে এলেন। হাসি মুখে খুব স্নেহ ভরে বললেন, "মা, কী হয়েছে, আমাকে একটু বলবে?"

রাগে ফুসতে ফুসতে মেয়েটি বলল, "এই দেখুন, এই ঢংগীর কাজ। নামাবলী গায়ে দিয়ে লম্পটের মত ব্যবহার করে যাচ্ছে। সেই তখন থেকে আমার চোখে তার হাতে আংটি দিয়ে আলো ফেলছে। আমি যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই আংটিটি ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে ইচ্ছা করে লাইটের আলো আমার চোখে ফেলছে। একটা অসভ্য, লম্পট, বদমাশ! তুই চিনিস না আমি কে? জুতিয়ে তোকে লাল করে দেব! ছোটলোক, অসভ্য জানোয়ার কোথাকার!"

মেয়েটির এই কথা শুনে হেসে ফেললেন নবদ্বীপ চক্রবর্তী। তিনি রামকে ডেকে বললেন, "আয় বাবা, আয়। এদিকে আয়। মা'য়ের সামনে মান-অপমান করতে নেই। যা, শুদ্ধ মনে মা'য়ের গলায় এই জবা ফুলের মালাটি পড়িয়ে দে।" রাম বাবার আদেশ মত নত চোখে বাবার দিকে এগিয়ে গেল। ঘটনাটি দেখে এগিয়ে এল মালতী। মালতী রাজেন সরকারের মেয়ে, মেয়েটির বান্ধবী। ভীর ঠেলে এগিয়ে এসে মালতী বলল, "না! না! বনশ্রী, তুই ভুল বুঝেছিস! রাম সে রকম ছেলে নয়। সে খুব ভাল ছেলে। সৎ-মেহনতি। ও তো আমাদের গ্রামের গর্ব। গ্রাম শুদ্ধ লোক চোখ বন্ধ করে জোর গলায় ওর স্বভাব-চরিত্রে বিশ্বাস করতে পারে। সে কখনোই এমন কাজ করতে পারে না।"

মুখ বেঁকিয়ে বনশ্রী জবাব দিল, "ভাল ছেলে, না ছাই! দেখতেই তো পাচ্ছি।" এমন সময়ই ঘটল ঘটনাটা। বনশ্রীর চোখে আবার আলোর ঝিলিক এসে পড়ল। লাইটের আলো রামের হাতের আংটি থেকে প্রতিফলিত হয়ে সোজা বনশ্রীর চোখে। রাগে কট-কট করতে করতে বনশ্রী তাকিয়ে দেখল রাম মা কালী'র মূর্তিতে জবা ফুলের মালা পড়িয়ে দিচ্ছে। পিছনের বাকী খবর তার নেই। খুব অবাক হল বনশ্রী, খুব অবাক হল গ্রামবাসীরা। রামের পিছনে তো আর দুটি চোখ নেই যে, সে একেবারে সই-সই করে পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা বনশ্রীর চোখে হাতের আংটির আলো ফেলবে? রাম যে ইচ্ছা করে কিছুই করেনি তা বুঝতে বাকি রইল না কারোর। সব কিছু একেবারে জলের মত পরিষ্কার হয়ে গেল বনশ্রীর কাছে, সবার কাছে। ভিড়ের মধ্য থেকে ঐ সময় এক দুষ্ট জোর চীৎকার করে উঠল, "কালী মাই কী!" প্রচণ্ড ধ্বনিতে প্রতিধ্বনি হল "জয়!" আবার জয়ধ্বনি উঠল, "রাজা রাম কী!" প্রতিধ্বনি এল "জয়!"

বনশ্রীর মুখে আর কোনও ভাষা রইল না। সে ভ্যাবলার মত শুধু রামের পানে চেয়ে রইল। তারপর ধীরে ধীরে হাত জোর করে সেখানেই হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। রাগ, ঘৃণা, অভিমান সব বদলে গেল ভালবাসায়। অনুতাপ আর আনন্দের এক ঝড় উঠল মনে। সে না পাড়ল কাঁদতে, না পাড়ল হাসতে। পাথরের মত শুধু তাকিয়ে রইল রামের দিকে। ঐ সময়ের মধ্যে কত বার যে সেই আংটির আলো তার চোখ ছুঁয়ে গেল তার হিসেব নেই। মা কালীর কাছে মনের কথা মনে মনেই বলতে লাগল বনশ্রী। রামের আংটির আলো বারে বারেই এসে পড়তে লাগল বনশ্রীর বন্ধ চোখে। কিন্তু বনশ্রী চোখ খুলেনি, চোখ খুলে দেখতে চায়নি রাম কোথায়? কারণ সে জানে, রাম যেখানেই থাকুক এখন থেকে শুধু তারই থাকবে। আর এই আলো, উড়ে এসে তার চোখেই পড়বে। রাম হয়তো এসবের কিছুই জানে না, কিন্তু তার হাতের আংটি সব জানে, ঠিক জানে, বনশ্রী কোথায়! সেই আলোকে আর বাধা দিল না বনশ্রী। উল্টো নিজেই মনে-মনে চাইতে লাগল, এই আলো যেন বারে-বারে তার চোখেই এসে পড়ে, চিরদিন এসে পড়ে। মা কালীর কাছে একাগ্র চিত্তে প্রার্থনা করতে লাগল সে, "মাগো, শুরুটা যেমন তুমি করেছ, শেষটাও কিন্তু তুমিই করো মা। আমি আমার সব কিছু তোমার চরণে রেখে গেলাম, আমার রামকে তোমার চরণে রেখে গেলাম। ভাল-মন্দ, মঙ্গল-অমঙ্গল এবার তুমিই জানো।" ঠিক তখুনি ধীরে একটি আশীর্বাদের হাত তার মাথায় নেমে এল। নবদ্বীপ চক্রবর্তী আদরের সুরে বললেন, "মন শান্ত হল তো মা? মান-অপমান, মান-অভিমান সব কিছু মা'র উপর ছেড়ে দাও। মা সব দেখবেন, মা সব জানেন। তিনি তো আমাদের মা, তিনিই জানেন কিসে আমাদের মঙ্গল হবে।"

ফ্যালফ্যাল চোখে নবদ্বীপ চক্রবর্তীর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল বনশ্রী। তারপর ধীরে উনাকে প্রণাম করে উঠে এল। এবার আর চোখ তুলে রামের দিকে তাকাতে পারল না সে। ভালবাসার লজ্জায় চোখ আপনি নীচে নেমে এল। ধীর পায়ে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা নিজের গাড়ির দিকে হাটতে লাগল বনশ্রী। কিন্তু ঠিক অনুভব করতে লাগল, আংটির আলো এখনো তার মাথায় ঝরে পড়ছে। পিছন ফিরে আর তাকায়নি সে। হঠাৎ তার পথ আটকে দাঁড়াল মালতী, "কী রে, চলে যাচ্ছিস যে? এটা কী ভাল হচ্ছে? না বলেই চলে যাচ্ছিস? চল, প্রসাদ নিয়ে তবে যাবি।"

বনশ্রী মুচকি হেসে বলল, "আমি তো আমার প্রসাদ পেয়ে গেছি রে। আমার সব চেয়ে বড় প্রসাদ। রাম। মা তো তাকেই আজ আমার ঝুলিতে দিয়ে দিলেন।"

ঠাট্টা করে মালতী জবাব দিল, "মা রামকে তোর ঝুলিতে দিলেন, না কি তোকে রামের ঝুলিতে দিলেন?"

লাজুক চোখ বনশ্রী বলল, "দু'টাই।" তখুনি রামের আংটির আলো আবার বনশ্রীর চোখে এসে পড়ল। বিস্ময়ে ওরা তাকিয়ে দেখল, রাম দুই হাত উপর তুলে মা কে প্রণাম করছে। বান্ধবীর সামনে লজ্জায় নুইয়ে পড়ল বনশ্রী। খুব ব্যস্ত হয়ে বলল, "ঐ দেখ? এখনো আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। মনে হচ্ছে আজকে আমাকে পাগল না করে আর ছাড়বে না। আমি এখুনি পালাই রে। আমার খুব ভয় করছে। যাই।"

বনশ্রীকে আর বাধা দিল না মালতী। শুধু তার হাত ধরে বলল, "একটি কথা বলি বনশ্রী। কথাটি মনে রাখিস। যাকে আজ মনে-মনে সাথে করে নিয়ে যাচ্ছিস তার টাকা পয়সা না থাকতে পারে, কিন্তু সে গুনে-মানে, স্বভাব-চরিত্রে সোনার মানুষ। তাকে তোর রামের মতই করে রাখিস। আর শোন, সে তোর কলেজেই পড়ে, তোর মতই ফার্স্ট ইয়ার। দেখা করতে কোন অসুবিধা হবে না।"

অত্যন্ত খুশিতে বান্ধবীর হাতে একটি চুমু খেয়ে বান্ধবীকে জড়িয়ে ধরল বনশ্রী। তারপর বান্ধবীর কাছে বিদায় নিয়ে সেই গভীর রাতে নিজের গাড়িতে করে বাড়ি ফিরল সে।
পরবর্তী পর্ব

আগের পর্ব গুলি: ১ম পর্ব    ২ য় পর্ব    ৩ য় পর্ব    ৪ র্থ পর্ব    ৫ ম পর্ব   

রাজবংশী সিরিজের অন্য গোয়েন্দা গল্প:

মাণিক্য   
সর্দার বাড়ির গুপ্তধন রহস্য   


All Bengali Stories    22    23    24    25    26    27    28    29    30    31    (32)    

## Disclaimer: RiyaButu.com is not responsible for any wrong facts presented in the Stories / Poems / Essay / Articles / Audios by the Writers. The opinion, facts, issues etc are fully personal to the respective Writers. RiyaButu.com is not responsibe for that. We are strongly against copyright violation. Also we do not support any kind of superstition / child marriage / violence / animal torture or any kind of addiction like smoking, alcohol etc. ##


◕ RiyaButu.com, এই Website টি সম্পর্কে আপনার কোনও মতামত কিংবা পরামর্শ, কিংবা প্রশ্ন থাকলে নির্দ্বিধায় আমাদের বলুন। যোগাযোগ:
E-mail: riyabutu.com@gmail.com / riyabutu5@gmail.com
Phone No: +91 8974870845
Whatsapp No: +91 6009890717